শিলিগুড়ি : উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধার এবং সুরক্ষার দাবিতে জাতীয়স্তরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের দাবি উঠল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এবং লোকপালের কাছে সেই দাবিপত্র পাঠিয়েছে দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরাম। তার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ই-মেল মারফত সেই চিঠি পেয়েছেন ফোরামের কর্তারা। তারপরই চা বলয় সহ উত্তরের বিভিন্ন এলাকার একশোটিরও বেশি শিশু পাচারের কেস স্টাডি রিপোর্ট আকারে আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ফোরাম। রিপোর্ট তৈরির জন্য অবসরপ্রাপ্ত একাধিক বিচারপতি, আইনজীবী, আইনের অধ্যাপকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ দল।
উত্তরের চা বলয় সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচার হয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধারে দীর্ঘদিন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে একাধিক সংগঠন। সরকারি উদ্যোগে নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে বের করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। পাচার রোধে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করা একাধিক এনজিও, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্তা, মহকুমা ও জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষগুলির যৌথ উদ্যোগেও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে বলেও জানান তিনি। তবে সেই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিভিন্ন এনজিও কর্তারা। তাঁদের মতে, আলাপ-আলোচনা, সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ হচ্ছে ঠিকই, তবে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের কাজে গতি আসেনি। সেই কারণেই এবার ইশ্যুটিকে জাতীয় স্তরে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার। ফোরামের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ১১ জুন আলিপুরদুয়ারে একটি গণশুনানি করেছিল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। সেখানে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার তিন জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেই শুনানিতে চা বলয়ে পাচার হওয়ার শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। একই বছর ২৩ ও ২৪ জুলাই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক কোঅপারেশন অ্যান্ড চাইল্ড ডেভেলপমেন্টের গুয়াহাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে উত্তরবঙ্গ এবং অসমের চা বলয় থেকে নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে উচ্চস্তরের পর্যালোচনা হয়। তারপরও নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ।
অমিতবাবু জানিয়েছেন, রিপোর্ট তৈরির জন্য তাঁরা যে বিশেষ দল তৈরি করেছেন তাতে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি প্রদীপ্ত রায়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীশ রায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সংযুক্ত মৈত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পারদর্শী প্রায় ১০০ জন ব্যক্তি এবং সমাজকর্মী আছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের ফলে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার বা সুরক্ষা আরও বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে। এই সময় উচ্চপর্যায়ে হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। আমাদের রিপোর্টে প্রত্যেকটি কেস স্টাডির সঙ্গে নিখোঁজ পরিবারের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই হাই পাওয়ার কমিটি দ্রুত গঠিত হোক।