সমীর দাস, জয়গাঁ : যেখানে প্রয়োজন একটি বড়মাপের সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের, সেখানে ভরসা একটিমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তার উপর চিকিৎসকের অভাবে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সুবিধা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪ লক্ষ বাসিন্দার স্বাস্থ্য পরিষেবার ভার একজন চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসকের উপর। বিষয়টি নিয়ে সীমান্ত শহর জয়গাঁর বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। দ্রুত এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানোর দাবিতে বাসিন্দারা সরব হয়েছেন। যদিও আলিপুরদুয়ারের ডেপুটি সিএমওএইচ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, জয়গাঁ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা একাধিকবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।
ভারত-ভুটান সীমান্তের শহর জয়গাঁ ব্যবসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ার জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সরকারিভাবে জয়গাঁর জনসংখ্যা ৬০ হাজার হলেও এখানে ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কিন্তু তাঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য একটিমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তার উপর ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাব সহ অন্য পরিকাঠামোগত সমস্যার জেরে বাসিন্দাদের যন্ত্রণা বাড়ছে। বর্তমানে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি একজন চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসকের ভরসায় রয়েছে। পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর একজন হোমিওপ্যাথকে নিয়োগ করেছে। এছাড়া এখানে ৪ জন নার্স ও ২ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান রয়েছেন। কিছুদিন আগে প্রসবের জন্য ৫ শয্যার ইন্ডোর চালু করা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সেই সুবিধাও ৬ মাসের উপরে বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে এখান থেকে শুধু বহির্বিভাগের পরিষেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। একজন চিকিৎসককে এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে পরিষেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। চিকিৎসক ও অন্তর্বিভাগ না থাকায় দুর্ঘটনায় আহত ও গুরুতর ব্যাধি নিয়ে আসা রোগীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কালচিনির লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ৬০ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। একদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় থাকা রোগীদের এতটা পথ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। পাশাপাশি এলাকার দুস্থ বাসিন্দারা টাকার অভাবে চিকিৎসার জন্য ব্লক বা জেলা হাসপাতালে যেতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাঁরা চাইছেন এলাকায় বড় ও আধুনিক সুয়োগসুবিধাযুক্ত হাসপাতাল চালু করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার বলেন, জয়গাঁর মতো শহরে বড় হাসপাতালের প্রয়োজন। সেখানে নামমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে রাখা হয়েছে। বাসিন্দা মিনু ভুজেল বলেন, এলাকায় হাসপাতাল না থাকায় দুস্থ বাসিন্দাদের সমস্যাই বেশি হয়। গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁরা গাড়ি ভাড়া করে কালচিনি বা আলিপুরদুয়ারে যেতে পারেন না। পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীরাও সমস্যায় পড়েন। এ প্রসঙ্গে জয়গাঁ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রামাশংকর গুপ্তা বলেন, জয়গাঁয় একটি উন্নতমানের হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা স্বাস্থ্য দপ্তরে একাধিকবার জানিয়েছি।
তবে শুধু চিকিৎসকের অভাব বা পরিষেবা নিয়ে নয়, এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আরও সমস্যা রয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাসপাতাল চত্বরে আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও সেই কাজ শেষ হয়নি। তার উপর দীর্ঘদিন ধরে ছুটি না পাওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দাযিত্বে থাকা চিকিৎসক ডাঃ অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছুটির আবেদন জানালেও চিকিৎসক না থাকায় তা মঞ্জুর হয়নি। ফলে বাড়ি যেতে পারছি না।