অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি : অর্ঘ্য ব্যবস্থাতেই কি বিপদ এড়ানোর সমাধান লুকিয়ে? খোদ পুণ্যার্থীরাই এমনটা মনে করছেন। রবিবার রাতে জল্পেশে আসার সময় চ্যাংরাবান্ধার(Changrabandha) কাছে গাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১০ পুণ্যার্থীর মৃত্যুর ঘটনা এখনও বেশ টাটকা। এরই মধ্যে খোদ জল্পেশ মন্দিরের গর্ভগৃহে নামার সিঁড়িটিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠল। বহু পুরোনো এই সিঁড়িতে রেলিং বসানোর পর জায়গাটি বেশ অপ্রশস্ত হয়ে পড়েছে। রবিবার রাতে মন্দির চত্বরে প্রচণ্ড ভিড় হয়েছিল। স্মরণাতীতকালে তাঁরা এমন ভিড় দেখেননি বলে অনেকেই জানিয়েছেন। সেই ভিড়ে অনেকেই ওই রাতে এই জায়গা দিয়ে গর্ভগৃহে নামতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। ভাগ্য সহায় থাকায় সেদিন বড়সড়ো কোনও বিপদ ঘটেনি।
দুর্ঘটনা এড়াতে পুণ্যার্থীদের একটা বড় অংশের দাবি, ঝুঁকি নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ না করে, তার বদলে বাইরেই এমন ব্যবস্থা করা হোক যাতে পুণ্যার্থীর ঢালা জল সরাসরি শিবলিঙ্গের মাথায় গিয়ে পড়বে। এই ব্যবস্থাই অর্ঘ্য ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এই ব্যবস্থায় পুণ্যার্থীরা গর্ভগৃহের বাইরে বড় পাত্রে জল ঢালেন। পাত্রের সঙ্গে গর্ভগৃহের ভিতরের শিবলিঙ্গের পাইপলাইন যুক্ত থাকে। বাইরের পাত্রে জল ঢালার পর তা সরাসরি শিবলিঙ্গে গিয়ে পড়ে। ভক্তরা তা দেখতেও পারেন। ইতিমধ্যেই হুগলি জেলার তারকেশ্বর শিব মন্দিরে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এছাড়াও দেওঘরের বাবাধামেও এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এই ব্যবস্থা চালুর পর থেকে এই মন্দিরগুলিতে তাঁরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করছেন বলে পুণ্যার্থীরা জানিয়েছেন।
সূত্রের খবর, জল্পেশে শ্রাবণী মেলা নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে প্রস্তুতি বৈঠকের সময় অর্ঘ্য ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সেই প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জল্পেশ মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব বললেন, পুণ্যার্থীরা সবসময়ই মন্দিরে প্রবেশ করে শিবের মাথায় জল ঢালতে চান। মন্দিরের সিঁড়িগুলি যথেষ্ট বড়, সেগুলি পিচ্ছিলও নয়। এছাড়া মন্দির কমিটির তরফে স্বেচ্ছাসেবকরা মন্দিরের ভিতরে থাকেন। তাই কোনও সমস্যা হওয়ারই কথা নয়।
প্রায় ১২ ফুট মাটির নীচে গর্ভগৃহে জল্পেশ শিব মন্দিরের শিবলিঙ্গ রয়েছে। পুণ্যার্থীদের সেখানে নেমে শিবের মাথায় জল ঢালতে হয়। এর জন্য পাকা সিঁড়ি রয়েছে। বেশ বড় এই সিঁড়িটি অনেকদিনের পুরোনো। বর্তমানে স্টিলের রেলিং বসিয়ে জায়গাটিকে দুভাগ করা হয়েছে। সেটির একদিক দিয়ে সাধারণ টিকিটের পুণ্যার্থী এবং অন্যদিক দিয়ে বিশেষ টিকিটের পুণ্যার্থী, অতিথি এবং ভিআইপিদের ঢোকানো হয়। রেলিং দেওয়ার ফলে এই সিঁড়িটি আরও অনেকটাই সংকুচিত হয়ে গিয়েছে। শ্রাবণী মেলার সময় এই সিঁড়ি দিয়ে বহু পুণ্যার্থী একসঙ্গে হুড়োহুড়ি করে গর্ভগৃহে নামতে থাকেন। গর্ভগৃহের মধ্যে শিবলিঙ্গে জল ঢালতে ভিড়ের মধ্যে পুণ্যার্থীদের চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার দশা হয়। এছাড়া, গর্ভগৃহে প্রবেশে অন্য কোনও প্রবেশপথ না থাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মন্দিরের গর্ভগৃহের মধ্যেও শিবলিঙ্গের চারদিকে আলাদাভাবে স্টিলের রেলিং দেওয়া রয়েছে। ফলে গর্ভগৃহের ভিতরে আগের তুলনায় জায়গা অনেকটাই কমেছে। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী শিবের মাথায় জল ঢালছেন।
সমস্যা মেটাতে পুণ্যার্থীদের একটি বড় অংশ সরব হয়েছেন। বিপ্লব দাস অসম থেকে পরিবার নিয়ে জল্পেশে শিবের মাথায় জল ঢালতে এসেছিলেন। তিনি বললেন, কোলে শিশু নিয়ে জল্পেশ মন্দিরে সিঁড়ি দিয়ে গর্ভগৃহে প্রবেশের সময় পিছন থেকে ভিড়ের ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে বড় বিপদ হয়নি। তার থেকে বাইরে যদি জল ঢালার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেই প্রক্রিয়া অনেক বেশি নিরাপদ হয়। শিলিগুড়ি থেকে আসা পুণ্যার্থী রূপা সরকার বলেন, জল্পেশ মন্দিরের গর্ভগৃহে থাকা শিবলিঙ্গ ছোঁয়া বহুদিনই হল বন্ধ। অনেক দূরে রেলিংয়ে বাইরে থেকে জল ঢালতে হয়। এর থেকে বাইরে থেকেই যদি শিবলিঙ্গে জল ঢালার ব্যবস্থা করা যায় তবে বিপদ এড়ানো যাবে। জল্পেশ মন্দিরে অর্ঘ্য ব্যবস্থা চালু হলে তাঁদের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমবে বলে প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।