নয়াদিল্লি: বাংলার রাজ্যপাল পদে শপথ গ্রহণের পর, প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রথম সাক্ষাতেই বাংলা নিয়ে তাঁর স্বপ্ন এবং চিন্তাভাবনার কথা জানালেন নবনিযুক্ত রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C. V. Ananda Bose)। প্রধানমন্ত্রী বাসস্থানে আয়োজিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই বৈঠকে তাঁর ‘ম্যান অফ দ্য আইডিয়াস’ এর কথা অত্যন্ত মন দিয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বাংলার রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ পরিকল্পনা করেছেন নতুন রাজ্যপাল। তারই একটি মৌখিক খসড়া প্রধানমন্ত্রীর সামনে পেশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এই সফরে রাজ্যপাল দেখা করবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে, জানা গেছে বিশেষ সূত্রে। তবে এও জানা গেছে, সময় পেলে উপরাষ্ট্রপতি তথা বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন বর্তমান রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, নতুন রাজ্যপাল রূপে বুধবার শপথ নেওয়ার পর প্রোটোকল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি-সহ প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে শনিবার সকালে দিল্লি এসেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। দুপুরেই তিনি দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাথে। উভয়পক্ষ থেকেই এই বৈঠককে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে ব্যাখ্যা করা হলেও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে রাজ্যপালের বলে সূত্রের খবর। সেখানে তাঁর পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা যেমন তিনি বর্ণনা করেছেন তেমনি আলোচনা হয়েছে বেশ কয়েকটি সমস্যা নিয়েও। যার মধ্যে অবশ্যই আছে রাজ্য এবং রাজ্যপালের সম্পর্কের বিষয়টি। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের উন্নয়নের জন্য কয়েকটি পরিকল্পনার কথাও এদিন প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন রাজ্যপাল বলে সূত্রের খবর। জানা গেছে, শনিবার রাতে বা রবিবার সকালে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। প্রোটোকল অনুযায়ী কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল নিযুক্ত হলে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করাটা আবশ্যিক কর্তব্য। সেই অনুযায়ী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর মুর্মুর দরবারে উপস্থিত হবেন তিনি।
তবে সবথেকে বেশি কৌতুহল রয়েছে রাজ্যপালের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা এই মুহূর্তে গুজরাট নির্বাচনের প্রচারে বেশিরভাগ সময়ই কাটাচ্ছেন গুজরাটে। সেই কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে রাজ্যপালের সাক্ষাতের সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু রাজ্যপাল পদটি মূলত দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অন্তর্গত। প্রতি তিনমাস অন্তর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রাজ্যে সম্বন্ধে রিপোর্ট জমা করতে হয় ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপালদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক খুঁটিনাটি সমস্যা সম্বন্ধে অবগত করাতে হয় তাঁকে। এ ক্ষেত্রে অমিত শাহ রাজ্যপাল বোস’কে কী কী নির্দেশ দেন, তাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
এরই সাথে রয়েছে ধনকরের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনাও। আনন্দ বোসের পূর্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সাথে বঙ্গের রাজ্য প্রশাসনের ‘সাপে-নেউলের’ সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রাক্তন রাজ্যপালও ছেড়ে কথা বলেননি। প্রকাশ্যে একাধিকবার রাজ্যপালকেও বিরোধিতা করতে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নিয়ম করে প্রতিদিন রাজ্যের বিরুদ্ধে সিরিজ টুইট করে দেগেছেন গোলা। রাজ্য এবং রাজ্যপালের এই দ্বৈরথের মধ্যেই, ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে জগদীপ ধনকরের কোনও বিরোধিতাই করেনি মমতা ব্রিগেড। সে ক্ষেত্রে ধনকরের সঙ্গে আনন্দ বোসের যদি সাক্ষাৎ হয়, তার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্যে। ধনকর-বোস সাক্ষাৎ হলে প্রাক্তনী যে বর্তমান রাজ্যপালকে রাজ্যের বিষয়ে কিছু জরুরি ‘টিপস’ দেবেন-ই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই রাজ্য ও নতুন রাজ্যপালের এই ‘আপাত সুসম্পর্কে’র ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হতে চলেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রাজনৈতিক মহল।