শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : ড্রাইভার পদে চাকরি পাইয়ে দিতে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার পরিকল্পনা। ফাঁস হয়ে গেল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (North Bengal University) দুই তৃণমূল নেতার কথোপকথনের অডিও। অডিওতে যাঁদের গলা শোনা যাচ্ছে তাঁরা দুজনই তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। অভিযুক্তদের একজন সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি প্রভাতকুমার যাদব, অন্যজন বর্তমান সভাপতি অমিতকুমার গুপ্তা। অডিওর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন অমিত। তবে প্রভাতের দাবি, অমিত তাঁকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবেই অডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও উত্তরবঙ্গ সংবাদ ওই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যাচ্ছে, ড্রাইভার পদে একজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রভাত, অমিতকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ ফ্লোরিকালচার অ্যান্ড অ্যাগ্রি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (কোফাম) এর এক কর্মীর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। সেই কথোপকথনে চাকরির জন্য তিন লক্ষ টাকা ঘুষের কথাও বলা হয়েছে। অত্যন্ত গোপনে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে বলা হয়েছে। পরিকল্পনা জানাজানি হলে দুজনই যে ফেঁসে যেতে পারেন সেই আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন প্রভাত।
অডিও ফাঁস হতেই শোরগোল পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অধিকারিক বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না। অমিতের বক্তব্য, অডিওটি পুরোনো। তবে যে কথোপকথন হয়েছে সেটা সঠিক। যে সময় ওই আলোচনা হয়েছিল তখন প্রভাত কর্মী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে ছিলেন। সেই পদের অপব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে একজনকে ড্রাইভার হিসাবে চাকরি দেওয়ার এবং তার বদলে টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আমাকে ব্যবহার করে সেই কাজ করতে চেয়েছিল। তবে আমি তাতে রাজি হইনি। ওর অপকর্মের কথা দলকে জানিয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে দল ওকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। দলের অভ্যন্তরেও প্রভাত আর্থিক তছরুপের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ তুলেছেন অমিত।
প্রভাতের বক্তব্য, অমিত বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। তাই দলকে ও আমাকে কালিমালিপ্ত করতে পরিকল্পনা করে মিথ্যা অডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। ওই ধরনের কোনও কথা আমি ওকে বলিনি। তাছাড়া ওই ধরনের কোনও নিয়োগও হয়নি। সবটাই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। যদিও তৃণমূল নেতার দাবি মানতে নারাজ বিজেপি। বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ বলেন, তৃণমূল বিশ্ববিদ্যালয়কে ওদের পার্টি অফিস বানিয়ে ফেলেছে। অস্থায়ী কর্মী থেকে অধ্যাপক বা আধিকারিক, বেশিরভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রেই লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। যে অডিও ভাইরাল হয়েছে তাতেই সবটা স্পষ্ট। ড্রাইভার নিয়োগেই যদি তৃণমূল নেতা তিন লক্ষ নেন তাহলে অধ্যাপক নিয়োগে কত লক্ষের খেলা হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। আমরা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হতেই অমিত ও প্রভাতের অডিও ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। কর্মী, শিক্ষক, আধিকারিকদের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে সেই অডিও। তারপরও কেন কর্তপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করছে না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কোনও কমিটি গড়ে আজ পর্যন্ত তদন্তও করা হয়নি। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শংকর মালাকারের বক্তব্য, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই বলছিলাম টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি বিক্রি করছে তৃণমূল। ওদের নেতাদের কথোপকথনেই সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই। সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দুর্নীতির আঁতুড় বানিয়ে ফেলেছে তৃণমূল। চাকরি বিক্রিতে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার নিয়োগের ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নাম রয়েছে অভিযুক্ত প্রভাত যাদবের। যার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ তাঁর নাম কীভাবে এস্টেট অফিসারের ইন্টারভিউ তালিকায় এল তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মুখপাত্র বেদব্রত দত্ত বলেন, এখন পর্যন্ত বিষয়টি জানা নেই। ওই ধরনের কোনও অডিও শুনিনি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাঁরা দলকে নেতৃত্ব দেন তাঁদের কাছ থেকে খোঁজ নেওয়া হবে। দলীয় পর্যায়ে তদন্ত করে পদক্ষেপ করা হবে।
আরও পড়ুন: Nagarakata News | বনের পাশে চাষের চক্রব্যূহ, ধান রক্ষায় উদ্যোগ কৃষি দপ্তরের