বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ’চুপির কাষ্ঠশালির’ ছাড়িগঙ্গা পাখিদের প্রিয় স্থান। চুপির পাখিরালয়ের পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই ছাড়িগঙ্গা এখন নানা কারণে অবলুপ্ত হতে বসায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন পর্যটকবাহী নৌকার মাঝি ও ব্যবসায়ীরা। শীতের মরশুমে দেশ বিদেশের নানা প্রজাতির পাখি উড়ে এসে জড়ো হয় ছাড়িগঙ্গার চুপির পাখিরালয়ে। সেইসব পাখি দেখার টানে এই রাজ্য সহ দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা চুপির কাষ্ঠশালির’ ছাড়িগঙ্গায় ছুটে আসেন। পর্যটকদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রোজগারের পথও খুলে যায় এলাকাবাসী ও মাঝিদের। কিন্তু গঙ্গার স্রোতের জল ঢোকা কমে যাওয়ায় এখন ছাড়িগঙ্গা যেন অবলুপ্ত হতে বসেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। এই বছর শীতে চুপির পাখিরালয়ে পাখিদের আগমন ঘাটতি ঘটেছে বলেই এলাকাবাসী ধারণা। পাখিদের ঘাটতি দেখে তাই কার্যতই যেন হতাশ হয়ে পড়েছেন পর্যটকবাহী নৌকার মাঝি ও পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা।
পূর্বস্থলীর চুপি কাষ্ঠশালীর পাখিরালয়ের একদিকে রয়েছে ছাড়িগঙ্গার বিশাল জলাশয়। আর অপর দিকে রয়েছে গাছ গাছালিতে ভরা সবুজের সৌন্দর্য। শীত পড়লেই চীন, তিব্বত, সাইবেরিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের পাখির আগমন শুরু হয় চুপির পখিরালয়ে। সেইসব পাখিদের নামও গালভরা। রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, পিনটেল, কটন টিল, কমন কুড, সিঁদুর মাথা উইজিয়ন, ব্রোঞ্জ উইন জাকানা, লার্জ ইগ্রেট, গ্রে হেরন এইসব পাখির এখানে দেখা মেলে। এইসব পাখি দেখার টানে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। পাখি দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে কটেজ সহ পরিযায়ী আবাস। রয়েছে নৌকাবিহারের ব্যবস্থাও। নৌকায় চড়েই বিশাল জলাশয় ঘুরে দেশ বিদেশের পাখি দেখার সাধ মেটান পর্যটকরা। পাখিদের ছবি ক্যামেরা বন্দি করার জন্য পর্যটকরা সারাটা দিন নৌকা বিহারে মত্ত থাকেন।
পর্যটকবাহী একটি নৌকার মাঝি রনজিৎ দাস জানান, নৌকায় পর্যটকদের চুপির পাখিরালয় ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য শতাধিক মাঝি রয়েছেন। মূলত শীতের সময়েই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা বেশী সংখ্যায় চুপির পাখিরালয় দখতে আসেন। তারা নৌকাবিহার করে পাখি দেখেন, পাখিদের ছবি তোলেন। পর্যটকদের নৌকাবিহার করিয়েই মাঝিদের রোজগারের সংস্থান হয়। এলাকার ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদেরও রোজগার হয়।
পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ছাড়িগঙ্গা অবলুপ্তির পথে চলে যেতে বসেছে, এই কথা মানতে চান নি।উল্টে তিনি দাবি করেন, এই বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে ভাগীরথীর জল এখন চৈত্র বৈশাখ মাসের মত হয়ে রয়েছে। ভাগীরথীর জল এত কম থাকাটা আগে কখনও হয় নি।ভাগীরথীতে জল কমার কারণে ছাড়িগঙ্গাতে জল ঘাটতি ঘটেছে। ছাড়িগঙ্গায় এমন কিছু পলি পড়েনি। জল বাড়লেই পলি সরে যাবে। পাখিরালয়ের কাছেই ২ একর খাস জমি পাওয়া গিয়েছে। আরও পর্যটক টানতেই জায়গায় পর্যটক আবাস, ফুলের বাগান ও পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।