জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি : সামনেই বাংলা নববর্ষ। কিন্তু লকডাউনের জেরে দোকান বন্ধ থাকায় নতুন হালখাতা বিক্রিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি-দুই শহরেই হালখাতা তৈরির সঙ্গে যুক্ত বহু কারিগর। এই বছর তাঁদের ব্যবসা প্রায় বন্ধের মুখে। বাংলা নববর্ষের দিন কেন্দ্রের লকডাউন উঠছে। রাজ্যের লকডাউন উঠবে তার পরদিন। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না কারিগররা।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষে হালখাতা তৈরির জন্য বিহারের মুজফফরপুর থেকে জলপাইগুড়ি এসেছিলেন মহম্মদ আবিদ। ঋণ নিয়ে হালখাতা তৈরির কাজও শুরু করেছেন কিন্তু করোনার জেরে হালখাতা বিক্রির কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আবিদ। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ঋণের টাকা মেটাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব এই হালখাতা ব্যবসায়ী। প্রায় ৭০ বছর আগে আবিদের ঠাকুরদা প্রথম জলপাইগুড়িতে এসে হালখাতা তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। নববর্ষ ছাড়া রামনবমীতেও হালখাতা বিক্রি হয়। এরপর থেকে তা পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই বছরও স্ত্রী, ভাই সাবির ও এক আত্মীয় আমজাদকে নিয়ে জলপাইগুড়ি এসেছেন। শহরের একটি ধর্মশালাতে ঘরভাড়া নিয়ে সেখানেই হালখাতা বানাচ্ছেন তাঁরা। আবিদ জানিয়েছেন, হালখাতা তৈরির কাঁচামাল কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি সেই ঋণ মেটানো নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। আবিদ জানান, করোনার প্রকোপ বাড়ার আগে হালখাতার প্রচুর অর্ডার এসেছিল। সেই অনুযায়ী খাতাও বানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের জন্য বেশিরভাগ ব্যবসাযীই খাতা সংগ্রহ করতে আসেননি আবিদ বলেন, খাতা বিক্রি না হলেও পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে থাকব। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা খাতা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, যা টাকা এনেছিলাম, সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়িতে চেনা কয়েকজন টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। তাই দিয়ে খরচ চালাচ্ছি। ধর্মশালার ঘরে এখন হালখাতার প্রচুর খাতা জমে রয়েছে। খাতাগুলি বিক্রি না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, নববর্ষের হালখাতা বানানো বন্ধ করে দিয়েছেন শিলিগুড়ির কারিগররা। শিলিগুড়িতে বংশপরম্পরায় খাতা তৈরি করেন মহম্মদ ফারুখ আজাদ, মহম্মদ একরাম, এজারুল হক প্রমুখ। কিন্তু লকডাউনে কাঁচামাল না পাওয়ায় খাতা তৈরি করতে পারছেন না তাঁরা। হালখাতা না বানাতে পারার পাশাপাশি ব্যবসা না হওয়ায় মনখারাপ একরামদের। মার্চ মাস পড়লেই নববর্ষের হালখাতা তৈরির কাজ শুরু হয়। কারিগরদের পরিবারের সকলেই হালখাতা তৈরিতে হাত মেলান। বাড়িতে কাজ চলার সঙ্গেই হাসমি চক থেকে রেলগেট পর্যন্ত দোকানগুলিতে বিক্রি হয় হালখাতা। কিন্তু এবার লকডাউনের জেরে নতুন হালখাতার চাহিদা তেমন নেই। দোকান না খোলায় অর্ডার মেলেনি। কলকাতা থেকে কাগজও আসছে না। এই বছর ব্যবসা কী হবে তা নিয়ে চিন্তা ফারুখদের। বহু খোঁজাখুঁজির পর মহম্মদ ফারুখ আজাদের দেখা মেলে। তিনি বললেন, প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সারাবছর এই নববর্ষের সময়ে জন্য অপেক্ষা করে থাকি। একমাস আগে থেকেই আমরা নববর্ষের হালখাতা তৈরির কাজ শুরু করে দিই। তবে দোকান না খোলা থাকায় এবার অর্ডার নেই। তাই এই প্রথম আমরা নববর্ষের খাতা তৈরি করছি না। একই কথা জানালেন মহম্মদ একরাম। তিনি বলেন, শহরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নির্দশন এই নববর্ষের হালখাতা। আমাদের সংসারও নির্ভর করে এই সময়ে ব্যবসার উপর। রামনবমীর জন্য কিছু খাতা বানিয়েছিলাম সেটাও বিক্রি হল না। কীভাবে সংসার চলবে জানা নেই।