রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : এতদিন সবার সামনেই সবকিছু চলছিল। কিন্তু কেউ কিছুই করেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং(Darjeeling) জেলা চেয়ারম্যান অলোক চক্রবর্তীর নির্মীয়মাণ বিলাসবহুল রিসর্টের খবর উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত হওয়ার পর অবশ্য প্রশাসনের টনক নড়ল। জেলা শাসকের নির্দেশে মাটিগাড়া ব্লক প্রশাসন শুক্রবার এলাকায় গিয়ে জমি জরিপ করে। এদিনই ব্লক থেকে জেলায় রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই জমি যে চা বাগান এবং রেলেরই, রিপোর্টে তারই উল্লেখ থাকছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে বলে দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক এস পন্নমবলম জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দলের অন্দরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। কথায় কথায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুজু দেখিয়ে কার্যসিদ্ধিতে সিদ্ধহস্ত খোদ দলের জেলা চেয়ারম্যানই যদি এই কাণ্ড করেন তাহলে তিনি কীভাবে দলের নেতা-নেত্রীদের বেআইনি কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলবেন সেই প্রশ্নই উঠছে। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা সরকারি দলে রয়েছি। আমরাই যদি এভাবে ফাউল করি তাহলে মানুষকে বলার নৈতিক অধিকার থাকবে না। এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত। এটা যেমন আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনই দলের বাকিদের ক্ষেত্রেও।’ তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’
গুলমা রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জমি দখল করে অলোক সেখানে চারতলা ভবন তৈরি করছেন। সামনে রেললাইন, পিছনে চা বাগান, আরও একটু দূরে তাকালেই গভীর জঙ্গল এবং পাহাড়ের হাতছানি। এমনই একটি অবর্ণনীয় সৌন্দর্যে ভরা জায়গায় ব্যবসা ভালো জমবে বুঝেই কোটি টাকা খরচ করে চারতলা এই রিসর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
কিন্তু জমিটি কার? অভিযোগ ছিল, মোহরগাঁও গুলমা চা বাগান এবং রেলের জমি দখল করেই এই রিসর্ট তৈরি হচ্ছে। সেই মতোই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, প্রায় চার কাঠা জমি দখল করে চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ওই রিসর্ট তৈরি হচ্ছে। কালীপুজোর আগেই এই রিসর্ট চালু করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রথম পাতায় এই খবর প্রকাশিত হতেই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে তীব্র হইচই পড়ে। সকালেই দার্জিলিংয়ে জেলা শাসক বিষয়টি দ্রুত তদন্তের জন্য জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে নির্দেশ দেন।
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মাটিগাড়া ব্লক প্রশাসনকে এদিনই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে বলেন। বেলা ১২টা নাগাদ মাটিগাড়ার বিডিও শ্রীবাস বিশ্বাস, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দীপেন লামা, দপ্তরের আধিকারিক, আমিন নিয়ে গুলমার ওই এলাকায় যান। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ সেখানে থেকে জমি জরিপ করেন। সূত্রের খবর, জমি জরিপের সময় সেখানে অলোকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি ওই জমিটি কিনেছেন বলে সরকারি আধিকারিকদের কাছে দাবি করেছেন। তবে, প্রশাসনিক আধিকারিকদের দাবি, দখল হওয়া জমি ৭০ শতাংশ গুলমা চা বাগানের এবং ৩০ শতাংশ রেলের। দীপেন লামার বক্তব্য, ঘটনার তদন্ত করে আমাদের এদিন সন্ধ্যার মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। সেই মতো রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। বাকিটা জেলা প্রশাসনই বলতে পারবে।
তৃণমূলেরই একটি অংশের দাবি, দলের স্ট্যাম্প লাগিয়ে কেউ কেউ নিজের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত। জেলা স্তরের একটি শীর্ষপদে থেকে শ্রমিক নেতার তকমাকে কাজে লাগিয়ে অলোক চা বাগান কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। তিনি যেখানে-সেখানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুজু দেখাচ্ছেন। দলের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে চা বাগান- সর্বত্রই তিনি অভিষেকের নাম ভাঙিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে চাইছেন। এনিয়ে শহরের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।