সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : দুর্গাপ্রতিমা তৈরি নিয়ে দোটানায় রয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। কাঠামো গড়ে খড়ের আদল বানিয়ে দুর্গামূর্তির প্রাথমিক কাজটা শুরু হয়ে যায় বৈশাখেই। ফাল্গুন-চৈত্র মাসের মধ্যেই কারিগরদের বায়না দিয়ে চুক্তি পাকা করতে হয় প্রতিমা কারখানার মালিকদের।
কিন্তু এবছর সেই কাজ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন নামী মৃৎশিল্পী এবং প্রতিমা কারখানার মালিকরা। লকডাউনে বিক্রি হয়নি বাসন্তীপুজোর প্রতিমা। হালখাতা না হওয়ায় বিক্রি হয়নি লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তিও। ফলে পুঁজিতে টান পড়েছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা হলফ করে বলতে পারছেন না কেউই। এই অবস্থায় দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন শিল্পীরা। প্রাথমিকভাবে একেকটি দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করতে খরচ হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে কারিগর ও শ্রমিকদের বায়নার টাকা। ফলে যেসব কারখানায় ২৫-৩০ বা তার বেশি প্রতিমা তৈরি হয়, সেখানে বৈশাখ মাসে লগ্নি করতে হয় লাখ টাকার বেশি। জমানো পুঁজি এবং ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করতে হয় মৃৎশিল্পীদের।
একটি প্রতিমা কারখানার মালিক গদাধর পাল বলেন, এবছর প্রাথমিকভাবে আমরা তিরিশটি মূর্তি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারিগর-শ্রমিকদের বায়না করেছি। বাঁশ, খড়, কাঠের অগ্রিমও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চরম সমস্যায় পড়ে গেলাম। সমস্ত বাসন্তীপ্রতিমা আটকে গেল। ৫০-এর উপর অন্যান্য প্রতিমাও অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে কারখানায়। লকডাউন উঠে গেলেও পুঁজির অভাবে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজে হাত দেব কী করে ভেবে পাচ্ছি না। আরেক কারখানা মালিক শ্রীবাস সরকার বলেন, প্রথম যখন করোনা ভাইরাসের কথা শুনলাম তখন আমরা ভেবেছিলাম এবার দুর্গাপুজোয় করোনাসুর তৈরি করব, যাকে বধ করবেন মা দুর্গা। কিন্তু এখন কাজ বন্ধ হয়ে যা পরিস্থিতি তাতে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজ কীভাবে শুরু করব তাই বুঝে উঠতে পারছি না।
তবে শুধু মৃৎশিল্পীরাই নন, করোনার জেরে আশঙ্কায় রয়েছেন পুজো আয়োজকরাও। এবছর সুবর্ণ জয়ন্তী রয়েছে ধূপগুড়ি নবজীবন সংঘের। ক্লাবের অন্যতম কর্তা গৌতম পাল বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু হলেও এখন সবই বন্ধ হয়ে রয়েছে। এবারে সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিশাল বাজেট নিয়েও আমরা এখন দিশেহারা অবস্থায় আছি।