রেজাউল হক, পুরাতন মালদা : এনআরসি তালিকায় নাম ওঠাতে লাগবে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে এদেশে বসবাস সংক্রান্ত নথি। কিন্তু সেই নথি নেই অসমের মাজুলি জেলার মিলনপুর গ্রামের ৭১ বছরের বৃদ্ধা দেবী সরকারের। সেই নথি সংগ্রহ করতে গত ১৫ দিন ধরে পুরাতন মালদা পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীপুর কলোনিতে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। সেখানেই থাকে তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন। কিন্তু এখনও সেই নথি সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। নথি না থাকলে অসম সরকার তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ওই রাজ্যে থাকতে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
খুব ছোটোতেই বাবা-মা মারা যায় দেবী সরকারের। তাঁকে বড়ো করেন তাঁর কাকা। ছোটোতেই বাড়ির সবাইকে নিয়ে তাঁর কাকা বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে আসেন। বসবাস শুরু করেন দেবীপুর কলোনিতে। তাঁরা সবাই পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী। ১৯৬৬ সালে তাঁর বিয়ে হয় দ্যুতিমান সরকার নামে এক মৎস্যজীবীর সঙ্গে। বৃদ্ধা বলেন, ১৯৬৯ সালে তাঁর স্বামী তাঁকে নিয়ে অসমে চলে যান। ১৯৭৭ সালে মাজুলি জেলার মিলনপুর গ্রামে তাঁরা বিঘাখানেক জমি কিনে সেখানে বাড়ি বানান। সেই বাড়িতেই তাঁর ৫ ছেলেমেয়ের জন্ম। তাঁদের সবার ভোটার ও আধার কার্ডও রয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের আগের কোনো নথি না থাকায় তাঁদের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি। সেই তালিকায় নাম ওঠাতে তিনি গড়মোড় আদালতের দ্বারস্থ হন। কারণ, তিনি বিয়ে পর সেই রাজ্যে বসবাস করছেন।
আদালত তাঁকে বাবার বাড়ির নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তিনি সেই নথি নিতে মালদা এসেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো নথি জোগাড় করতে পারেননি। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, তিনি যেন তাঁকে ওই রাজ্যে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি এখানকারই মেয়ে হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই আর্জি জানাচ্ছেন। দিদির এই সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর ভাইরা। এক ভাই গোবিন্দ হালদার বলেন, অসমের আদালত ১১ নভেম্বরের মধ্যে দিদিকে সমস্ত নথি জমা দিতে বলেছে। কিন্তু তেমন প্রামাণ্য নথি এখনও জোগাড় হয়নি। কী করা যাবে বুঝতে পারছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদেরও আবেদন, এই অবস্থায় তিনিই কোনো উপায় বের করুন। আমার দিদি যাতে অসমে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দিন।