মাদারিহাট: মিষ্টির স্টোর রুমে গামলায় সারি দিয়ে সাজানো ছিল রাজভোগ, গোলাপজাম, চমচম, কমলাভোগ, গুড়ের রসগোল্লা। মনের আনন্দে সবক’টি গামলা প্রথমে বাইরে বের করে আনে মাকনা। তারপর গামলার সব মিষ্টি সাবাড় করে জলদাপাড়ার বেতাজ বাদশা। মনে হয়, মানুষের মতোই মাকনারও রুচির পরিবর্তন হয়েছে। ঘাস, লতাপাতা, চাল, ডাল, আটা খেয়ে মনে হয় মাকনার অরুচি ধরে গিয়েছিল। সেইজন্য রুচির পরিবর্তন করতে এবার মিষ্টির দোকানে হামলা চালায় সে। আর দোকানের স্টোর রুমের পাকা দেওয়াল ভেঙে বিয়েবাড়ির বরাদ্দকৃত মিষ্টির পুরোটাই খেয়ে সাবাড় করল। আশ্চর্যর বিষয় হল, মিষ্টি খাওয়ার পর পান খাওয়ার সাধ জাগে মাকনার। সেইজন্য মিষ্টি খাওয়ার পর হামলা চালায় পাশের পান দোকানে। তবে পান দোকানের লোহার শাটার পুরো ভাঙতে না পারায় পা খেতে পারেনি সে। আর ততক্ষণে বনকর্মীদের গাড়ি পৌঁছাতেই লেজ গুটিয়ে পালিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ঢুকে যায়। ঘটনাটি হয়েছে শুক্রবার ভোররাতে মাদারিহাট অশ্বিনীনগর তিন নম্বর ওয়ার্ডের রাজেশ বণিকের মিষ্টির দোকানে। পান দোকানের শাটার ভাঙল সঞ্জয় সাহার। মাকনার মিষ্টি খাওয়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
রাজেশ বলেন, ‘একটি বিয়েবাড়ির মিষ্টির বরাত ছিল। প্রায় ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন রকমের মিষ্টি মজুত ছিল স্টোর রুমে। শুক্রবার রাত দুটো নাগাদ হাতি হামলা চালিয়ে প্রায় সব মিষ্টি খেয়ে ফেলেছে।’ বনকর্মীদের কাছে জানা গেল, এই মাকনা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মধ্য মাদারিহাটে পাঁচজনের ঘর ভেঙে ফেলে। আর বন দপ্তরের গাড়ির আওয়াজ পেতেই উধাও হয়ে যায় মাকনা। হাতিটি এতটাই চালাক যে, ঘর ভাঙার সময় আগে শুঁড় দিয়ে আলতোভাবে দেখে নেয় টিনের বেড়া আছে কি না। এক বনকর্মী জানালেন, টিনের বেড়া থাকলে দুটো কারণে এই মাকনা ভাঙে না। একটি কারণ আওয়াজ হতে পারে। আর দ্বিতীয় কারণ টিনে শরীর কেটে যেতে পারে। মাদারিহাট এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার অনিমেষ ঘোষ বলেন, ‘এই মাকনাকে নিয়ে আমরা ভীষণ চিন্তিত। কখন কোথায় কীভাবে হামলা চালায় বুঝতেই পারি না। ঘর ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই উধাও হয়ে যায়।’ তিনি জানান, মাদারিহাটজুড়ে এই মাকনা তাণ্ডব চালাচ্ছে। বন দপ্তরের তিনটি গাড়ি ওর পাহারায় থাকলেও আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না।