মিঠুন হালদার, মুর্শিদাবাদ: করোনার জেরে সারা দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছে, তখন সব থেকে বেশি বিপদের মুখে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ১৫ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। নিজেদের পরিবারের মুখে দু’বেলা খাবারের জোগার করাই এখন চ্যালেঞ্জ হযে দাড়িয়েছে তাদের কাছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায যদিও বা শ্রমিকের কথা চিন্তা করে সামাজিক দূরত্ব বজায রেখে বিড়ি শিল্পকে চালু করার কথা বলেছিলেন। তাঁর এই ঘোষণার পর কিছুটা হলেও চিন্তা মুক্ত হয়ে আসার আলো দেখতে পেয়েছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকরা কোনও ভাবেই কেন্দ্র সরকারের ঘোষিত লকডাউন না তোলা পর্যন্ত কারখানায় কোনও কাজ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
আরও খবর: তৃণমূলের তরফে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হল বানারহাটের বিভিন্ন এলাকায়
স্বাভাবিক সময়ে প্রায় প্রতিদিন মুর্শিদাবাদে কুড়ি কোটি বিড়ি উৎপাদিত হয়। যার প্রায় ৯৫ শতাংশ বিড়ি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি করা হয়। প্রায় সারা বছরে এক একটি কারখানা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে।
কারখানার মালিক পক্ষের বক্তব্য, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাঁকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেই বিড়ি বিক্রি হবে কোথায়।
এই প্রসঙ্গে ধুলিয়ান অরঙ্গবাদ বিড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, ‘বিড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা সত্যিই সংকটের মুখে। তাদের পাশে আমরা সাধ্যমতো থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিকদের যদি আমরা বিড়ি তৈরির জন্য কাচা মাল দিয়ে দিই, তারপরে বিড়ি তৈরির পর সেই বিড়ি বিক্রি হবে কোথায। উৎপাদিত বিড়ির অধিকাংশটাই বিক্রি হয় পঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু এই মুহূর্তে লকডাউনের কারণে কোনও রাজ্যেই সেই বিড়ি পাঠানো সম্ভবপর নয়। সব থেকে বড় কথা মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার কথা বলেছেন সেটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’
আরও খবর: করোনা ছড়ানোর অজুহাতে দিল্লিতে ২ মহিলা চিকিৎসককে নিগ্রহ
এই বিষযে জঙ্গিপুরের তৃণমূলের সাংসদ তথা বিড়ি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বিড়ি শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি ভাল প্রস্তাব। কিন্তু কোনওভাবেই কোনও মালিক এই মুহূর্তে বিড়ি তৈরি করতে রাজি হবেন না। বিষযটি নিয়ে আমি কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা বলব। যদি এই বিড়ির লরিগুলিকে কোনওভাবেই ভিন রাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেয়।’
এই বিষয়ে রাজ্যের বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি আবুল হাসনাৎ খান বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় সমস্ত বিড়ি শ্রমিকদের শুধুমাত্র এক শতাংশ শ্রমিক হয়তো উপকৃত হতে পারেন। তিনি ঘোষণার আগে একবার চিন্তা করলেন না যে এই বিড়ির কাঁচামাল কারখানার মালিকরা দেবেন কিনা।’
এই সময়ে তৈরি হওয়া বিড়ি কোথায় যাবে? এই বিষযে ধুলিয়ানের এক বিড়ি শ্রমিক লিয়াকৎ শেখ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথায ভেবেছিলাম যে কিছুটা হলেও আমাদের সমস্যার সমাধান হবে। এইভাবে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার ফলে পরিবারের সদস্যরা এর পরে কি খাবে সেটাই প্রশ্নের মুখে।’
আরও খবর: আটকে পড়া তেলেঙ্গানার পরিবারের পাশে দাঁড়াল ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ
এই বিষয়ে বিড়ি কারখানার মালিকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যতদিন না পর্যন্ত লকডাউন স্বাভাবিক হবে ততদিন পর্যন্ত কোনওভাবেই বিড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে না। এরপরের দিনগুলিতে করোনার কারণে না হলেও আমরা না খেতে পেযে এমনিই মরে যাব।
এই বিষয়ে রাজ্যের শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তথা বিড়ি শিল্পপতি বলেন, ‘শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী যে কথা ঘোষণা করেছেন তাঁকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কোনও মালিক এই সমযে কাজ শুরু করতে রাজি নয়। কারণ লকডাউনের কারণে উৎপাদিত বিড়ি বিক্রি করা সম্ভব নয়। বিষয়টির বিকল্প কোনও রাস্তা বের করার কথা আমরা চিন্তা করছি এবং সেই সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গেও এই বিষযটি নিয়ে আলোচনা করার কথা ভাবছি। এই মুহুর্তে বিড়ি শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সরকার এবং আমরা আছি।’