রতুয়াঃ সম্পত্তি হাতিয়ে বৃদ্ধকে মারধর করে বাড়ি থেকে বেড় করে দিল পরিবারের লোকেরা। এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের রতুয়ার বাহারালে। অসহায় বৃদ্ধকে ঘরে ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
জানাগেছে, রতুয়া-১ ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর সাহাপুরের ৮৫ বছর বয়সে বৃদ্ধ মীর এরাইতের বর্তমানে দিন কাটছে গাছের নীচে। ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে। বৃদ্ধের পরিবারে রয়েছে দুই ছেলে মীর হেদায়েত ও মীর সেকাইত এবং ৫ মেয়ে। তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী আমিনা বিবি পাঁচ বছর আগেই মারা গিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মনোয়ারা বিবি বেঁচে রয়েছে। তার কোন সন্তান নেই। তিনি পেশায় ভ্যান চালক ছিলেন, মাঝেমধ্যে এলাকার বিভিন্ন হাটে হলুদ বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। তবে অসুস্থতার কারনে তিনি এখনও আর রিকশা চালাতে পারেন না। এখন ছেলে মেয়ে প্রত্যেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এরাইতের ভিটেমাটি সহ তিন বিঘা সম্পত্তি ছিল। প্রায় ৫ বছর আগে ছেলেমেয়েকে সমানভাগে সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। তবে মোস্তারী খাতুন নামের ছোট মেয়েকে ভাগের সম্পত্তি একটু তিনি বেশি দিয়েছেন। আর এখান থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। ছোট মেয়েকে সম্পত্তির পরিমাণ বেশি দেওয়ার ফলে অন্যান্য ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধকে মারধর করে ঘর থেকে বেড় করে দেয় বলে অভিযোগ। ফলে আশ্রয় হারিয়ে তিনি বাহারালের উত্তর সাহাপুরের হাবেলি গ্রামের আম গাছ তলায় থাকতে শুরু করেছেন। পাড়া প্রতিবেশীরাই দুবেলা করে খাবার দিচ্ছেন বৃদ্ধকে।
স্থানীয় গ্রামবাসী শেখ আফসার আলি জানিয়েছেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে বৃদ্ধ বাবাকে তার ছেলে মেয়ে ঘরছাড়া করেছে। ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তিনি এখানে পড়ে রয়েছেন। ছেলে মেয়েকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার পর থেকে তার উপরে অত্যাচার শুরু হয়। তিনি ছোট মেয়ে মোস্তারির কাছে থাকছিলেন। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে সেই মেয়ে তাকে এখানে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছেন। এখন কেউ তাকে দেখভাল করে না। আমরা পাড়া-প্রতিবেশীরা দুবেলা খাবার দিচ্ছি। তবে এভাবে কতদিন! বিষয়টি প্রশাসনকে জানান হয়েছে। তবুও এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কেউ এগিয়ে আসেনি। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বাড়ি রয়েছে মালতি পুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বকসির।তিনিও কোন খোঁজ খবর নেননি। প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমাদের একটাই দাবি বৃদ্ধকে যেন ঘরে ফেরান হোক।
যদিও শ্বশুরকে ঘর ছাড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুত্রবধূ মহেতুন বিবি, তিনি জানিয়েছেন ছোট মেয়ে মোস্তারি খাতুনকে সম্পত্তি ও টাকা পয়সা দিয়েছে। এমনকি ইন্দ্রা আবাস যোজনার টাকা আত্মসাৎ করেছে ছোট মেয়ে। আমাদের কোন কিছু দেয়নি। আমার শ্বশুর দীর্ঘদিন ধরে ছোট মেয়ের কাছেই থাকছিলেন। শুনেছি ছোট মেয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তিনি গাছের নিচে থাকেন বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বকসি বলেন খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা খুব শীঘ্রই তাঁকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারিভাবে তিনি ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন এবং বিনা পয়সায় রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন। যেহেতু আমাদের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি পরিচালিত, পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা তিনি পাচ্ছেন না। বিজেপি পঞ্চায়েত থাকার ফলে এলাকায় এরকম ঘটনা বেশি ঘটছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।