মিঠুন হালদার, মুর্শিদাবাদ: করোনার গ্রাসে বাকি ছিল মুর্শিদাবাদ। এবার সেখানেও থাবা বসাল করোনা।
মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার সালারের ধুর্সূনদা গ্রামের এক ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধের শরীরে মিলল করোনার হদিস। এমনটাই জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস। শনিবার সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্তের পরিবারের মোট ২৯ জন সদস্যকে স্থানীয় প্রশাসন সরকারি কোয়ারান্টিন সেন্টারে নিয়ে গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি গত ১৪ এপ্রিল একটি গাড়ি করে সালার থেকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। সারাদিন ধরে পিজি হাপসাতালে থাকার পরে সেখান থেকে আবার সালারের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। তারপর থেকেই বৃদ্ধের শরীরে করোনার উপসর্গ ধরা পড়ে।
আরও খবর: সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরের কর্তা সহ কলকাতায় ৪ জনের শরীরে মিলল করোনা
শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ফের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকদিন আগে বৃদ্ধকে ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরের রক্ত এবং লালারস পরীক্ষা করার পরে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই বৃদ্ধকে কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষযে মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘মুর্শিদাবাদ জেলার সালার-এর এক ব্যক্তি বর্তমানে কলকাতাতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত, রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। ওই ব্যক্তি এখানে থাকা অবস্থায় কোন কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন বা তার পরিবারের লোকজন কতজনের সংপর্শে গিয়েছে তা খতিয়ে দেখছি। তার পরিবারের মোট ২৯ জনকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে।’
আরও খবর: হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চার ছেলে কাজের জন্য ভিন জায়গায় থাকেন।এলাকাতে সেই সঙ্গে সচেতন থাকার জন্য স্বাস্থ্যদপ্তর এবং স্থানীয় প্রসাশনের তরফে প্রচার চালানো হচ্ছে। তার তিন ছেলে দিল্লিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন এবং এক ছেলে আরবে কাজ করত। তাদের প্রত্যেককে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। এলাকাকে জীবানুমুক্ত করার কাজ চলছে।’
প্রসঙ্গত, আমাদের রাজ্যে যেখানে কলকাতা সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতে থাবা বসিয়েছে করোনা। সেখানে একমাত্র বাকি ছিল মুর্শিদাবাদই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে এই ধরণের পরিস্থিতি নিয়ে নিজে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। লকডাউন মানার জন্য প্রত্যেক মুহুর্তে তিনি সর্বস্তরের মানুষকে অনুরোধ করছেন, সেখানে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকাতে লকডাউনকে উপেক্ষা করে মানুষ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিশেষভাবে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের সবজি বাজার, ফলের বাজার সহ ডাক্তারদের চেম্বারে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার ছবি ধরা পড়ছে। এই নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয় মানুষদের একাংশের অভিযোগ। আর বাকি দিনের মতো লকডাউনের সময়ে সাধারণ মানুষ টোটো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সব জায়গাতেই।