নাগরাকাটা: একটানা দশ বছর বন্ধ রয়েছে রেডব্যাংক ও সুরেন্দ্রনগর চা বাগান। সম্প্রতি শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে খোলার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখন অনিশ্চিত আবহে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে দুই বাগানের বাসিন্দাদের কাছে। তাঁরা অবশ্য এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন নিজেদের বাড়ির উঠোনে মাছ চাষকে ঘিরে। বিকল্প আয়ের এই প্রকল্পটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাগানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘বন্ধ বাগান দুটির পরিবারগুলি ব্যক্তিগতভাবে এতে উপকৃত হবে। নিজেরা বাড়িতে খাওয়ার পাশাপাশি মাছ বিক্রি করেও তাঁরা আয় করতে পারবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এসটি-এসি কমিশন, ১০০ দিনের কাজ ও মৎস্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে বন্ধ বাগানে মাছ চাষের প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। যার পোশাকি নাম ইন্ডিভিজুয়াল বেনিফিট স্কিম (আইবিএস)। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বাড়ির উঠোনের এক চিলতে জমিতে ৩ ফুট গভীরতার একটি করে পুকুর সেখানে খুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। জলাশয়টি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। সেখানেই প্লাস্টিকের আচ্ছাদন দিয়ে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্ষার এই মরসুমে জল প্রাপ্তিরও কোনও সমস্যা নেই। সেখানেই মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে কই, মাগুর, সিঙির মতো নানা ধরনের জিয়ল মাছ। তালিকায় রয়েছে বাটা কিংবা চারা পোনাও। মাছের খাবারের ৮ কিলোগ্রামের প্যাকেটও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তা শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে ফের দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।
স্থানীয় সূত্রেই জানা গেছে, রেড ব্যাংকের শালবনি ডিভিশনের ৭৭টি ও পাশের সুরেন্দ্রনগর চা বাগানে ৪ টি পরিবার এখন সরকারি সহযোগিতায় মাছ চাষ করছেন। সুরেন্দ্রনগরে আরো ২৪টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শুধু ওই দুই বন্ধ বাগানই নয় অন্যান্য চা বাগানেও মাছ চাষের প্রকল্পটি চালু করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। শালবনি ডিভিশনের প্রেমতুস ওরাওঁ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘এক মাস হল এই মাছ চাষে নেমেছি। বড় হয়ে গেলে বিক্রি করবো। এতে আয়ের নতুন দিশা খুঁজে পাবো বলেই মনে করছি।’ সুরেন্দ্রনগরের প্রদীপ তিরকী বলেন, ‘গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যখন এই প্রকল্পটির কথা বলেছিল শুনেই মনে ধরেছিল। আমাদের নিজেদের টাকা খরচ করে এটা করা সম্ভব ছিল না।’ এই প্রসঙ্গে এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অমিত সাবার বলেন, ‘বন্ধ বাগানে বিকল্প আয়ের এই উপায়টি প্রকৃত অর্থেই সাধুবাদযোগ্য। জিয়ল মাছ সহ যে সমস্ত মাছ দেওয়া হয়েছে সেগুলির চাহিদাও যথেষ্ট। মাস তিনেকের মধ্যেই শ্রমিকরা এর সুফল ঘরে তুলতে পারবে।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে বন্ধ বাগানদুটির শ্রমিকদের রুটি রুজি বলতে আশপাশের খোলা বাগানে গিয়ে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করা । সেটাও সবার জোটে না। দীর্ঘ দিন ধরে ১০০ দিনের কাজের পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প আয়ের এই উৎস সেখানকার কিছু পরিবারকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।