সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর : প্রতিব ছর বাংলা নববর্ষের শেষ দিন গাজনে শিব, দুর্গা, কালী কিংবা নন্দী-ভৃঙ্গি সাজেন বিতান, গৌরাঙ্গ, অর্জুন, মহাদেবরা। গাজনের দিনে সং সেজে, দল বেঁধে নাচ করে বেড়ান। কিন্তু এই বছর বাধ সেধেছে করোনা। লকডাউনের জেরে বন্ধ করা হয়েছে গাজনের নাচ। গাজনের দিনে তুলসীহাটা, বারদুয়ারি, কুশিদা, হলদিবাড়ি সহ নানা গ্রামে বাড়ি বাড়ি নাচ দেখিয়ে বেড়ান বিতান, গৌরাঙ্গরা। কিন্তু এবার ওঁদের মন খারাপ।
পেশায় কৃষিজীবী গৌরাঙ্গ দাস বলেন, প্রতি বছরই আমি এই সময় দলের সঙ্গে নাচতে বের হই। সাধারণত পৌরাণিক কোনও ঘটনার ওপরে আমরা পাঁচ-দশ মিনিটের নৃত্যনাট্য করে থাকি। কখনও কালীয়দমন, কখনও বা মহিষাসুর বধ কিংবা রাম-রাবণের যুদ্ধের ছোট ছোট পৌরাণিক কাহিনী আমরা নাচের মাধ্যমে করি। সকাল থেকেই এলাকার নানা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে এই নাচ দেখাই বছরের শেষের দিন পর্যন্ত। নববর্ষের দিন আমাদের এই নাচ-গানের উৎসব চলে। আমাদের মধ্যে কেউ দুর্গা, কালী, রাম, লক্ষ্মণ, রাবণ, হনুমান, পুতনা রাক্ষসী সাজি। এতে যেমন আমাদের আনন্দ হয়, এলাকার মানুষও এই দিনগুলির জন্য সারা বছর মুখিয়ে থাকেন। বছর শেষে কিছু বাড়তি রোজগার হয়। এই বাড়তি রোজগারের ফলে আমাদের নববর্ষের দিন পরিবারের সঙ্গে ভালোই কাটে। কিন্তু এবছর কিছুই হল না। সরকার নির্দেশিত লকডাউন মেনে আমরা ঘরে বন্দি হয়ে আছি। বাড়তি রোজগার হয়নি বলে নয় এবছর এলাকার মানুষকে আমরা আনন্দ দিতে পারলাম না। এটাই আমাদের আফসোস।
আরেক গাজন শিল্পী বলেন, আমি প্রতি বছর এই নাচে দুর্গা সাজি। এছাড়াও বৈশাখ মাস থেকে বিভিন্ন এলাকায় মনসা গান হয়। সেখানেও আমি মনসা সেজে দর্শকদের মন জয় করি। কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণের জন্য সবকিছুই বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই সময় যে বাড়তি রোজগার হয়, তার থেকেও বড় কথা একঘেয়ে জীবন থেকে খানিকটা বেরিয়ে এসে আনন্দ করি। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায়। ওদের মুখের হাসি দেখে আমাদের সব ক্লান্তি চলে যায়। স্থানীয় শিক্ষক তপব্রত মিশ্র বলেন, সবসময় যে ওঁরা নাচের মাধ্যমে বিশাল কিছু রোজগার করেন, তা নয়। কিন্তু ওঁরা বাপদাদার আমল থেকেই প্রতিবছর চৈত্র বৈশাখ মাসে এই গাজনের নাচে অংশগ্রহণ করেন। গ্রাম বাংলায় নববর্ষের আগমন খানিকটা এঁদের হাত ধরে ঘটে। এলাকার বাসিন্দা উৎপল দাস বলেন, এই সময়টা দুপুরবেলা বুড়োবুড়ির মুখানাচ দেখতে এলাকার সবাই মুখিয়ে থাকি। তাছাড়া চড়ক ও নববর্ষে বিভিন্ন মেলা বসে। সেগুলো এবার হবে না।