বালুরঘাট: রায়গঞ্জ ফরেস্ট ডিভিশনের আওতায় থাকা জেলার বিভিন্ন বনাঞ্চলে বনভোজন নিষিদ্ধ করল বন দপ্তর। দক্ষিণ দিনাজপুরের(Dakshin Dinajpur) দোগাছি, কুমারগঞ্জ, ডাঙ্গা সহ একাধিক বনকে সংরক্ষিত অরণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দপ্তর। কারণ ওইসব এলাকায় পিকনিকের মাধ্যমে দূষণ, বন্যপ্রাণ ও প্রাণীর সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, জেলার মূলত এই বনগুলিই ছিল পিকনিক স্পট। যার জেরে কার্যত হতাশ জেলাবাসীর একাংশ।
ডিসেম্বর মাস পড়ে গিয়েছে। শীতের আমেজ শুরু হতেই পিকনিকের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে বন্ধুগোষ্ঠী। হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে বড় গাছে ঘেরা এলাকায় পিকনিক করতে সকলেরই ভালো লাগে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এতদিন বালুরঘাট তথা জেলার মানুষ দোগাছি, ডাঙ্গা ফরেস্টকে পিকনিক স্পট হিসেবেই দেখে এসেছেন। তাই শীত পড়তেই প্রতিবছর এখানে বিভিন্ন দলের পিকনিকের ধুম পড়ে যায়। সেখানেই চলে রান্নাবান্না থেকে খাওয়া দাওয়া সবকিছুই। কিন্তু গত কয়েক বছরে উচ্চস্বরে মাইক ও ডিজের আওয়াজে কার্যত তাণ্ডব পরিস্থিতি শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, থার্মোকল সহ বিভিন্ন প্লাস্টিক ও অপচনশীল বর্জ্য সেই বনাঞ্চলে ফেলে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর সুরক্ষার বিষয়টি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই বনাঞ্চলের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ওইসব এলাকাকে সংরক্ষিত অরণ্য বিবেচনা করা হয়েছে। যেখানে কেউ বনভোজন করতে পারবেন না। উচ্চস্বরে মাইক বাজানো সেখানে বন্ধ। এমনকি সেখানে ইচ্ছেমতো যাতায়াতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও ওই বনাঞ্চলে গ্রামবাসীরা কিছু কারণে যাতায়াত করেন বলে স্বীকার করেছে বালুরঘাট বন দপ্তর। তবে তা নিতান্তই নগণ্য। মূল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বনভোজন করতে আসা সাধারণ মানুষ। যারা বনাঞ্চলের স্বচ্ছতা নষ্ট করে পরিবেশের ক্ষতি করেন। বালুরঘাটের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের দোগাছি ফরেস্ট, ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর, ডাঙ্গা ফরেস্ট, কুমারগঞ্জ ফরেস্ট, তপনের গুরাইল, গুরাহার ফরেস্ট সহ একাধিক বনকে এই তালিকায় আনা হয়েছে। যার জেরে আমোদপ্রেমী কিছু সচেতন চরুইভাতি করতে আসা সাধারণ মানুষ পিকনিক স্পট হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রানা সরকার আক্ষেপ করেন, ‘আমাদের জেলায় পিকনিক করার তেমন জায়গা নেই। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আগে দোগাছি বা ডাঙ্গা ফরেস্টে যেতাম। কিন্তু সেখানে পিকনিক নিষিদ্ধ করা হল। এবার আর যাওয়ার তেমন কোনও জায়গা থাকল না। প্রশাসনের তরফে কিছু এলাকা পিকনিকের জন্য উন্মুক্ত রাখলে ভালো হয়।’
এই বিষয়ে বালুরঘাট ফরেস্টের রেঞ্জার সমীর শিকদার জানান, ‘দোগাছি সহ বিভিন্ন বনাঞ্চলে পিকনিক করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি অনুমতি সাপেক্ষেও নয়। অনুমতি চাইলেও কাউকে দেওয়া হবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকে লুকিয়ে চুরিয়ে আমাদের অগোচরে এসব এলাকায় বনভোজনের যদি মেতে ওঠেন। আমরা সেদিকে নজর রাখছি। আমাদের আওতায় থাকা সমস্ত বনাঞ্চল সংরক্ষিত অরণ্য। সেখানে প্রথমত প্রবেশই নিষিদ্ধ। তবে কিছু গ্রামবাসী যাতায়াত করেন। সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু হৈ হুল্লোড়, ডিজে বা মাইক বাজানো নিষিদ্ধ।’
আরও পড়ুনঃ দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সোশ্যাল অডিট, নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক