প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার পার্লামেন্টের এনেক্সিতে রাষ্ট্রপতি পদে যোগ্য প্রার্থী বাছতে বৈঠকে বসতে চলেছে তামাম বিরোধী শিবির। কিন্তু তার আগেই নয়াদিল্লিতে ঘন ঘন প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে বসবে বিরোধীরা। রবিবার তারই সলতে পাকানোর কাজ সারতে ৬ জনপথ রোডে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের (Sharad Pawar) বাড়িতে ‘গোপন বৈঠকে’ বসলেন বিরোধী দলের চারমূর্তি-কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়গে, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-র নেতা ডি রাজা ও এনসিপি প্রধান স্বয়ং৷ বিশেষ সূত্রের দাবি, এদিন পাওয়ারের আহ্বানেই তাঁর বাসভবনে ‘রূদ্ধ দ্বার’ বৈঠকে বসেন ওই চার নেতা। কিন্তু এ বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁরা মুখ খুলতে চান না। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ অবশ্য ঘনিষ্ঠ সূত্রে এই বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। শুধু রবিবার নয়, সোমবার পাওয়ারের নেতৃত্বে আবার মুখোমুখি হবেন বিরোধী নেতারা। এর পর মঙ্গলবার ২১ জুনের বৈঠকেই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই ‘ক্লোজ ডোর’ বৈঠক? রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী নির্বাচন করতে ইতিমধ্যে দু-দফায় ভাল মতো হোঁচট খেয়েছে বিরোধী শিবির। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্ল্যাক হর্স’ শরদ পাওয়ার স্বয়ং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছেন। শারদ পাওয়ারের পর কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাও (Farooq Abdullah) এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মমতার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হলেন না তিনি। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পাওয়ারের পরেই ফারুক আবদুল্লার নাম প্রস্তাব করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পাওয়ার আগেই সম্মানের সঙ্গে মমতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এবার ফারুক আবদুল্লাও সেই পথেই হাঁটলেন। বিকল্প মুখ হিসেবে উঠে এসেছে মহাত্মা গান্ধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধির (Gopalkrishna Gandhi) নামও। কিন্তু এ নিয়ে তিনিও যথাযথ ভাবে কিছু জানাননি। ফলত, এখনও পর্যন্ত প্রার্থী বাছাই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিরোধী শিবির।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমশ বিরোধীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে পরবর্তী বৈঠকে বিরোধীদের তরফ থেকে কে কে উপস্থিত থাকবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। আর এই অনিশ্চয়তায় অন্যতম নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূল সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই নির্বাচন ঘিরে মন কষাকষি শুরু হয়ে গিয়েছে মমতা ও শারদ পাওয়ারের মধ্যে। এমনকি প্রার্থী ঠিক করতে পাওয়ার আগামী মঙ্গলবার যে বৈঠক ডেকেছেন পাওয়ার, সেখানে আগের বৈঠকের কোনও উল্লেখ নেই। আর তাতেই চটেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কারণ, ওই বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে শরদ পাওয়ারকে পরবর্তী বৈঠক ডাকার কথা বলা হয়েছিল। এটা ছিল সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। তার পরও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগ পাওয়ারের তরফে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ৷ তাতেই ক্ষুব্ধ মমতা। জানা গেছে তাঁর বদলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) অংশ নেবেন ওই বৈঠকে।
এমতাবস্থায় এই জটিলতা কাটাতে কী করণীয়, তা জানতেই নাকি রবিবার তিন শীর্ষ বিরোধী নেতাকে নিয়ে নিজ বাসভবনে ‘রূদ্ধদ্বার’ বৈঠকে বসেছিলেন পাওয়ার৷ কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ বৈঠকের বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। সিপিআই শীর্ষনেতা ডি রাজা-কে এ বৈঠকের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। রাজা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সংসদে মূলপর্বের বৈঠকে বসার আগে পাওয়ারের নেতৃত্বে, সোমবার আবারও বৈঠকে বসবে বিরোধীরা। কিন্তু এদিনের বৈঠক নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করতে চান নি তিনি। সোমবারের বিরোধী দলীয় ‘ওয়ার্ম আপ’ বৈঠকে তৃণমূল থাকবে কি না, পাওয়া যায়নি সেই বিষয়ে কোনও তথ্যও৷ বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছেন, সাম্প্রতিক বিরোধী দলীয় গতিবিধি, মমতা-পাওয়ার সংঘাত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চূড়ান্ত বিরোধী প্রার্থী নির্বাচন ও ঐক্যমত্য ভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যই কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট শিবিরের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন এনসিপি প্রধান। সোমবারেও এই প্রক্রিয়া জারি থাকবে। এরপর মঙ্গলবার হবে ‘যবনিকা পতন’। দেখার বিষয়, এই নিয়ে কতদূর একত্রে পথ চলতে পারে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন : আজ ফের ইডির মুখোমুখি রাহুল গান্ধি