শিলিগুড়ি : ছোট থেকেই দুজনের কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার। কিন্তু পরিস্থিতির কাছে হার মানেননি কেউই। সমাজের সঙ্গে লড়াই করে ছিনিযে নিয়েছেন নিজের অধিকার। সমাজকে সৎপথে আয়ের বার্তা দিতে ফিনাইল বিক্রি করে জীবনের যুদ্ধের সাদা পাতায হার না মানার কাহিনী লিখছেন ভিমবার ব্লাইন্ড স্কুলের দুই বন্ধু বিশ্বদীপ সোরেন ও ছোটেলাল মুন্ডা। জীবনে সৎ থেকে উপার্জন করুক যুবসমাজ- চাইছেন দুই বন্ধু।
ইসলামপুরের ধনতলার বাসিন্দা বিশ্বদীপ ছোট থেকেই চোখে দেখতে পান না। নকশালবাড়ির আশাপুর টি এস্টেটের বাসিন্দা ছোটেলালও তাই। ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তি না থাকায় বহু সমস্যায পড়তে হয়েছে তাঁদের। বিশ্বদীপের বাড়িতে মা ছাড়াও রয়েছেন দুই দাদা ও বৌদি। অন্যদিকে, ছোটেলালের বাড়িতে মা ছাড়াও রয়েছেন স্ত্রী ও ছেলে। স্থানীয একটি স্কুলে পড়াশোনাও করে ছেলে। দর্শনে বিশেষভাবে সক্ষম এবং শ্রমিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় পড়াশোনা খুব বেশি হয়নি দুই বন্ধুর। তাই তেমন কাজও জোটেনি। কাজের খোঁজে ঘোরাফেরা করতে করতেই একদিন দুজনে সন্ধান পান ভিমবার ব্লাইন্ড স্কুলের। খোঁজখবর নিযে চলে যান সেখানে। ওই স্কুলে পড়াশোনা শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাঁরা। এর পর থেকে সেখানেই রয়েছেন দুই বন্ধু। বছরে দুবার নিয়ম করে বাড়িতেও যান। স্কুলে পড়াশোনা শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, পড়াশোনার পাশাপাশি শহরের হালহকিকত জানতে সংবাদেও নজর রাখেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমে দিনের পর দিন চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির খবর পড়ে বীতশ্রদ্ধ দুই বন্ধু একদিন সমাজের মানুষকে সততার বার্তা দেওয়ার চিন্তা করেন। সেইমতো ঘুরে ঘুরে ফিনাইল ফেরি করার চিন্তা করেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। স্কুলেই তৈরি ফিনাইল হাতে বেরিয়ে যান রাস্তায রাস্তায। লাঠি হাতে একে অপরের সহায় হয়ে থানা থেকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায পৌঁছে যাচ্ছেন দুই বন্ধু। দুজনের মধ্যে ছোটেলাল আবার বিয়েড়িতে পিয়ানো বাজান। বিয়ের মরশুমে পিয়ানো বাজিযে অফ সিজনে ফিনাইল বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর।
রাস্তায ফিনাইল বিক্রি করতে করতেই যুবসমাজকে নেশা, চুরি, ছিনতাই থেকে দূরে থাকার বার্তা দিচ্ছেন দুই বন্ধু। এদিন ছোটেলাল মুন্ডা বলেন, ‘আমরা চোখে দেখতে পাই না, তবুও ফিনাইল ফেরি করছি। যুবসমাজকে সততার বার্তা দিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বিশ্বদীপ সোরেন বলেন, ‘ইদানীংকালে চুরি, ছিনতাইযে মতো অপরাধ বেড়ে গিয়েছে। টাকার লোভে মানুষ এসব করছে। তাই সকলকে বলব এসবের থেকে দূরে থেকে সৎপথে উপার্জন করতে। এই বার্তা দিতেই আমরা দুই বন্ধু অন্ধ হয়ে পথে পথে ঘুরে ফিনাইল বিক্রি করছি।’
ছবি-শিলিগুড়ির রাস্তায় দুই বন্ধু।
তথ্য ও ছবি – রাহুল মজুমদার