প্রাচীন আয়ুর্বেদে চারটি পর্যায়ে সংক্রামক জীবাণুর মোকাবিলার কথা বলত প্রতিষেধক, সতর্কীকরণ, মৃদু লক্ষণ এবং মাঝারি ধরনের লক্ষণ। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হল, বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় যেসব গবেষণা চলছে, ভারতীয় বৈদ্য সম্প্রদায় তার বাইরে রয়েছে৷ তার অন্যতম কারণ হল, যুক্তি দিয়ে ব্যবহারিক বিষয় ব্যাখ্যা করার অক্ষমতা।

ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার (মেডিসিন), ওয়েল কনের্র্ল মেডিকেল কলেজ, নিউ ইয়র্ক
জীবাণুরা সংস্কৃতে কৃমি অথবা ভুটা হিসেবে পরিচিত। মানবদেহে জীবাণুর কার্যকলাপ দিয়ে আয়ুর্বেদে তাদের বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে, মাইক্রোবায়োলজিতে মনোযোগ দিয়ে নয়। গত শতকে ইউরোপীয় অনুবাদকরা কৃমি ও ভুটাকে পরজীবী এবং ভূত হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। সেটা ছিল গুরুতর বিভ্রান্তি। সংস্কৃতে কৃমি এবং ভুটা তাদেরই বলা হয় যাদের কার্যকলাপ মানবদেহের অন্দরে অথচ যাদের সাদা চোখে দেখা যায় না। এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বললেও কম বলা হয়। কারণ এর ফলে আধুনিক গবেষকরা আযুর্বেদের প্রাচীন জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রথম পর্যায়টি হল প্রতিরোধ অর্থাৎ যখন কোনও ব্যক্তি সংক্রামিত নন এবং সংক্রামিত হতেও চান না। করোনার সংক্রমণ শিখিয়েছে, আমাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত, ফুসফুসকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে হবে ও হজম ক্ষমতা যথাযথ থাকতে হবে। প্রতিষেধক হিসাবে আয়ুর্বেদে এমন কিছু ওষুধের কথা আছে যেগুলো গাছগাছালি থেকে তৈরি হয়। সব থেকে বড় কথা হল, ওইসব ওষুধের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এমন শক্তিশালী ওষুধ কেবল গাছগাছালি থেকেই তৈরি হয়। ভারতে এইসব ওষুধের ব্যবহার বৈধ। আমেরিকাতেও ডায়োরি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মানবদেহে স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সব থেকে ভালো ওষুধ হল গুডুচি। ভারতের কোনও কোনও জায়গায় এদের পরিচয় গিলয় বা গিলরয় হিসেবে। আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকানে পাউডার বা ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। বলা হয়, গিলয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেহের দূষিত পদার্থ দূর করে, রক্ত পরিষ্কার করে এবং ব্যাকটিরিযা বিরোধী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। হজমশক্তি বাড়াতেও এটি খুবই কার্যকরী।
প্রয়োজনীয় সতর্কতা: যেসব রোগী বহু বছর ধরে নাক দিয়ে জল পড়া বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য প্রাণাবাহাস্রোতাস কার্যকরী ওষুধ। এই ওষুধ তৈরিতে আপনি তাজা আদা, লেবু, গোলমরিচ, পিপালি, গুরুচি, তুলসী পাতা, বাসা, কণ্টকারি, দারুচিনি, এলাচ এবং পিপুল ফল ব্যবহার করতে পারেন।
গলা শুকিয়ে আসলে, নাক দিয়ে জল পড়লে এবং জ্বর ছাড়া শুকনো কাশি হলে প্রতিদিন দুবার ৪৬ আউন্স করে গাছগাছড়ার রস খেতে হবে। গাছগাছড়া জলে সেদ্ধ করুন, যতক্ষণ জল আসল পরিমাণের অর্ধেক বা ১/৪ অংশ হচ্ছে।
চটজলদি রেসিপি: এক আঁটি যষ্টিমধু সেদ্ধ করুন। তাতে ১ টেবিল চামচ ত্রিকাঠু চূর্ণ (শুনথি, পিপালি, গোলমরিচ), ৩টি তুলসী পাতা, ১/৮ চামচ সৈন্ধব লবণ যোগ করুন। প্রতিদিন সকালে এই রস আনন্দের সঙ্গে খান এবং বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিন।
চা বা কফি খাওয়ার আগে তাজা গাছগাছড়ার রস খান। অনেক সময় সুন্দর দেখতে টি ব্যাগে তুলসী আছে বলে দাবি করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাতে ব্লিচ করা ফিল্টার পেপার এবং পুরোনো গাছগাছড়া থাকে। তাজা গাছগাছড়া সরাসরি খেতে অসুবিধা হলে পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক আর্দ্র রাখুন। প্রতিদিন স্নানের আগে ১০১৫ মিনিট ঘরের কাজ করে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে বা ফ্লোর ওয়ার্ক আউট করে ঘাম ঝরাতে চেষ্টা করুন। পরিবারের কেউ দুর্বল হয়ে পড়লে, কারও কাশি হলে বা স্বাভাবিক তীব্র গন্ধ শুঁকতে না পারলে তার জ্বর হয়েছে কি না পরীক্ষা করান।
ওষুধ পেট পরিষ্কার রাখতে, হজম করতে, অন্ত্রে অপাচ্য অ্যান্টিজেনের সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা রোধ করে। এস আনন্দ ২০১৮ সালে অন্ত্র এবং ফুসফুসের অসুখের মধ্যে সংযোগ পর্যলোচনা করেছেন।
রুচির গুরুত্ব খিদে, খিদের অনুভতি, গন্ধ ও স্বাদের যথাযথ কাজের সঙ্গে জড়িত। এইসব বোধ লোপ পেলে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় একে অ্যানসমিয়া (ঘ্রাণশক্তির লোপ) এবং আগিউজিয়া (স্বাদঅনুভতির অভাব) বলা হয। এক্ষেত্রে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। আয়ুর্বেদিক মতে, দুপুর ও রাতের খাবার তেতো দিয়ে শুরু করা উচিত।
ঐতিহ্য বহনকারী ভারতীয় খাবারের মধ্যে নিমপাতা, করলা, মেথি শাক রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে চাঙ্গা রাখে। তেতো ওষুধ নাক ও মুখের স্বাদ গ্রহণকারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি কোষগুলি রক্ষা করতে এবং আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য শ্লেষ্মার উত্পাদন বন্ধ করে দেয় এবং কণাগুলো সরিয়ে দিতে কোষের লোমগুলি সক্রিয় করে তোলে। আই ডব্লিউ মাইনার নেতত্বে ইএনটি ডাক্তাররা বায়ু চলাচলের পথে সহজাত ইমিউনিটির ভুমিকা দেখিয়েছিলেন।
সকালে নাক আর্দ্র রাখুন, যাতে জীবাণু শুকনো ঝিল্লিতে প্রবেশ করতে না পারে। বসন্তে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়ে থাকে। নাক গহ্বরের সমস্যায় নস্যা তেল প্রতিরোধক গ্লাভসের মতো কাজ করে। অনু থাইলাম নামক নস্যা তেল নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য উত্কৃষ্ট। এতে বিভিন্ন তেতো ওষুধ থাকে, যেগুলোর এখন আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। এই ধরনের তেল নাক ও সাইনাসের শ্লেষ্মা আস্তরণ থেকে জীবাণুকে দূরে রাখে।
শীতে অনেকেই অতিরিক্ত হিটার ব্যবহারের জন্য শুষ্ক নাকের সমস্যায় ভোগেন। এক্ষেত্রে সকালে হাঁটতে যাওয়ার আগে বা স্নানের পরে বা বিছানায় যাওয়ার আগে প্রতিদিন ২৪ ফোঁটা নস্যা তেল ব্যবহার করুন। যেহেতু নারকেল তেল একটু মোটা হয় তাই অবশ্যই তিল তেল ভিত্তিক নস্যা তেল ব্যবহার করবেন। কেউ প্রাচীন পদ্ধতিতে ক্লিনজিং নস্যা তেল তৈরি করলে সেটাও বেছে নিতে পারেন।