শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: রাত বাড়লেই শুরু হচ্ছে অদ্ভুত সব শব্দ। কখনও শিলনোড়ায় মশলা বাটার মতো শব্দ, কখনও দেওয়ালে পেরেক ঠোকার আওয়াজ। কখনও আবার মাঝরাতে কেঁপে উঠছে গোটা ভবন। এইসব কাণ্ডকারখানায় ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (North Bengal University) নিবেদিতা হস্টেলে। বেশ কয়দিন ধরেই ওইসব আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রীরা। যদিও হস্টেল কর্তপক্ষের দাবি, ছাত্রীদের কেউ আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ওই ঘটনা ঘটাতে পারে। তার জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অযথা আতঙ্ক না ছড়িয়ে ঘটনার বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মত পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ল মোড়ের কাছেই ওই হস্টেল। তিনতলা ভবনে ১২০ জনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে থেকে হস্টেলে অদ্ভুত শব্দ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, ভবনের উত্তর দিকের ঘরগুলি থেকেই বেশি আওয়াজ হচ্ছে এবং তিনতলার ঘরগুলিতে কম্পন বেশি বোঝা যাচ্ছে। আবাসিকদের অভিযোগ, রাতে হস্টেলে সুপার বা সহকারী সুপারের কেউ থাকেন না। নিয়মিত নিরাপত্তাকর্মীদেরও দেখা মেলে না। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা।
দিনকয়েক আগেই প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা হস্টেলে এসেছেন। আসার পরেই এমন ঘটনায় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরমধ্যেই হস্টেলকে ঘিরে নানা গুজব ও ভৌতিক গল্প ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। ফলে ভয়ে হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন কয়েকজন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর বক্তব্য, ‘শুরুতে আমরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু দিন-দিন আওয়াজ বেড়েই যাচ্ছে। সবার ঘর তল্লাশি করা হয়েছে। দোতলার সব মেয়েকে নামিয়ে একটি ঘরে রেখেও দেখা যাচ্ছে আওয়াজ হচ্ছেই। ছাদ সহ ভবনের সর্বত্র খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখেও আওযাজের উৎস মেলেনি। কেন কম্পন হচ্ছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।‘ আর এক ছাত্রীর কথায়, ‘আমরা বারবার বলার পর কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী, আধিকারিক এসেছিলেন। ওঁরাও কিছুই পাননি। ইন্টারনাল পরীক্ষা চলছে। সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক শুরু হচ্ছে। ফলে পড়াশোনা লাটে উঠেছে। সন্ধ্যার পর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও বাইরে যেতে ভয় হচ্ছে।‘
প্রতিটি হস্টেলেই রাতে সুপার বা সহকারী সুপার থাকার কথা। কেন তাঁরা থাকছেন না তার উত্তর মেলেনি। নিবেদিতা হস্টেলের সুপার কৃতি ঘাটানির বক্তব্য, ‘এটা ঠিক, ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আওয়াজটা কী থেকে হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। হতে পারে মশকরা করার জন্য ছাত্রীদের কেউ ওই কাজ করছে। আমরা সবটা খতিয়ে দেখছি। রাতে কেউ থাকেন না, সেই অভিযোগ ঠিক নয়। সহকারী সুপারের ছেলে অসুস্থ থাকায় তিনি কয়েকদিন আসতে পারেননি।‘
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক দেবর্ষি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘ভূত বা অলৌকিক ঘটনা বলে কিছুই হয় না। সব কিছুর পেছনেই বিজ্ঞান বা যুক্তি আছে। ভৌতিক ঘটনার নামে গালগল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তার পেছনে নির্দিষ্ট স্বার্থ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ ভবনই অনেক পুরোনো। সেইসব দরজা-জানলায় হাওয়া লেগে আওয়াজ হতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত ছাত্রীদের আতঙ্ক কাটাতে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে ঘটনার বিচার করা।‘
আরও পড়ুন : জমি বিতর্কে উত্তপ্ত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়