হরিশ্চন্দ্রপুরঃ করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ রোধ করতে সারা দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। মানুষে মানুষে দূরত্ব কম রাখতে নিষিদ্ধ হয়েছে সামাজিক মেলামেশা জমায়েত এবং দল বেঁধে সব রকম কাজের। এর জেরে কাজ হারিয়ে ঘরে বসেই দিন কাটাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার গড়গড়ি, বাইশা বাগান প্রভৃতি এলাকার মুসাহার, বেদে, বিন সম্প্রদায়ের লোকেরা।
এরা মূলত যাযাবর সম্প্রদায়ের লোক। হরিশ্চন্দ্রপুরে বাস করলেও কাজের সূত্রে পরিবার সমেত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ঘুরে বেড়ায়। কারও কাজ মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি, কারও বা সাপ খেলা দেখানো, কেউবা তাবিজ মাদুলি কবিরাজি ওষুধ বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু লকডাউনের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সবই। এর জেরে চরম অসুবিধায় পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার এই যাযাবর পরিবার গুলি।
লকডাউন শুরু হওয়ার দিনে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের উদ্যোগে এদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। কিন্তু লক ডাউনের বেশ কিছুদিন যেতেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাওয়া ত্রাণের সমস্ত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আশেপাশের থেকে সংগ্রহ করে আনা কচু পাতা সেদ্ধ তার সঙ্গে ভাতের মার খাদ্য হিসাবে একমাত্র সম্বল। এই খেয়ে দিন কাটাচ্ছে এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার। এমনই একটি পরিবারের সদস্য জগদীশ বেদ বলেন, ‘চারিদিকে বন্ধের জন্য আমরা কাজ করতে বেরোতে পারছি না। প্রথম দিন এলাকার বিডিও অফিস থেকে চাল ও অন্যান্য খাবার জিনিস পাওয়া গেছিল। কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শেষ হয়ে যায়। আমাদের হাতে কোন টাকা পয়সাও নেই কোন জমানো খাবারও নেই। আমরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে তা বিক্রি করি। কখনো মাদারির খেলা দেখাই। তার সঙ্গে চলে তাবিজ মাদুলি বিক্রি। পরিবারকে নিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এখন জঙ্গল থেকে কচুপাতা নিয়ে ওটাই সেদ্ধ করে খাচ্ছি। বাচ্চাদের ও তাই খাওয়াচ্ছি। আমাদের মধ্যে কয়েকজনের রেশন কার্ড থাকলেও সেখান থেকে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছিনা। আমরা চাই অবিলম্বে সরকার আমাদের বাচ্চাদের কথা ভেবে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন’।
জেলা পরিষদের শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমি ওই এলাকার মানুষদের দুর্দশার কথা শুনেছি। ওরা বেশ কিছুদিন আগে এলাকায় ফিরেছে বলে শুনেছি। তাদের জন্য আরও ত্রাণ যাতে পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করছি। আর এখন রাজনীতি করার সময় নয়। কিছু নেতা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ঘটনার প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা না তুলে বরঞ্চ ওই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে আমরা বেশি খুশি হব। আমিও চাই তারাও ওই দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াক’।
এলাকার বিধায়ক মুস্তাক আলম বলেন, ‘আমি ওই এলাকার পরিবারগুলির জন্য বিডিও সাহেবকে অনুরোধ করেছি যাতে আরও কিছু ত্রান দেওয়া হয়’।