তনয় মিশ্র, মোথাবাড়ি: কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের মোথাবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজে প্রায় দু’কোটি টাকা আত্মসাং করার অভিযোগ উঠল। ওই গ্রামপঞ্চায়েতের ১২জন পঞ্চায়েত সদস্য লিখিতভাবে স্থানীয় বিডিওর কাছে এই অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ পেয়ে বিডিও তদন্তের আশ্বাস দিলেও অভিযোগটি উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান নিলুফা ইয়াসমিন। উল্টে তার অভিযোগ, ‘অভিযোগকারী পঞ্চায়েত সদস্যরা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্কিমের টাকা চুরি করার যে চক্রান্ত করেছিল তাতে সঙ্গ না দেওয়াতেই আমার বিরুদ্ধে দুর্নাম করার চেষ্টা করছে।’
জানা গিয়েছে, কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের মোথাবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৫ আসনের মধ্যে ১৪টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। প্রধান হয় তৃণমূলের নিলুফা ইয়াসমিন। এরপরই পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে প্রধানের সঙ্গে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সদস্যদের মতবিরোধ বাড়তে থাকে। পঞ্চায়েতের মোট ১২ জন সদস্য জোটবদ্ধভাবে প্রধানের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজের বিভিন্ন স্কিমে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। সবজি চাষ, বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে কোন কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েতের কিছু অসাধু কর্মচারীদের সাহায্যে এই কাজ করেছে প্রধান এমনই অভিযোগ পঞ্চায়েত সদস্যদের। পঞ্চায়েতের ১২ জন সদস্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন যত শীঘ্র সম্ভব তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রধানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হযোক। অভিযোগের প্রতিলিপি জেলাশাসক, জেলা পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন আধিকারিক, এমজিএনআরইজিএস প্রকল্প অফিসারকে প্রদান করো হয়েছে। যে সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রধানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন তারা হলেন নাইলা বিবি, কবিতা দাস, রূলেখা বিবি, হাসিনা পারভীন, জৈনুব খাতুন, জাহাঙ্গীর আলম, সেতাব উদ্দিন শেখ, আব্দুস সাইম, এনামুল হক প্রমুখ।
পঞ্চায়েত সদস্য নাইমা বিবি জানিয়েছেন, ‘প্রধান নিলুফা খাতুন আমাদের গুরুত্ব না দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছামত কিছু পঞ্চায়েত কর্মীর সাহায্যে একশো দিনের কাজের ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছে।’ আরও এক পঞ্চায়েত সদস্য কবিতা দাস জানান, ‘মূলত সবজি চাষ ও বৃক্ষরোপণ, ফুল চাষ সহ পনেরো থেকে কুড়িটি স্ক্যান মাস্টার রোল তৈরি করে যৎসামান্য কাজ দেখিয়ে প্রধান সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি বিডিও মালদা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমরা চাই গোটা অভিযোগের তদন্ত হোক।’ অভিযোগ পেয়ে কালিয়াচক-২ নম্বর ব্লকের বিডিও সঞ্জয় ঘিসিং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও মোথাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অভিযুক্ত প্রধান নিলুফা ইয়াসমিন জানান এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা পঞ্চায়েতের সবাই মিলে আলোচনার ভিত্তিতেই একসাথে কাজ করছি। ওদের কথামত আমি পুকুর চুড়িতে সাহায্য না কড়ায় উল্টে ওরাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। যারা যারা অভিযোগ করেছেন তাদের প্রত্যেকের স্বামী বা স্ত্রীর নামে সবজি চাষ ও ফুল চাষের স্কিম আছে। তারাই এই প্রকল্পগুলির গোটা স্কিমটি ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছিল।আমি বাধা দেওয়ায় উল্টে ওরা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। প্রয়োজন হলে আমিও অভিযোগকারী পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে যাব।