প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গুজরাট(Gujarat) নির্বাচনে বিপুল জয়লাভের পর এবার কেন্দ্রীয় বিজেপির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে গুজরাট মডেলকে কাজে লাগিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে এগোতে চান মোদি-শা। কর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং সংগঠনকে মজবুত করতে ২০২৩-এর মাঝামাঝি থেকেই রাজ্যে আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা। জয়ের লক্ষ্যে প্রতি বুথে ন্যূনতম ৩০ জনের বর্ধিত কমিটি তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাতে কুড়িটির বেশি আসনে পদ্ম ফোঁটে তার জন্য গুজরাট নির্বাচনের পর থেকেই কোমর বাধতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই বিজেপির নজরে ছিল। সেই কারণেই বিগত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা বিধানসভায় তিন থেকে সাতাত্তরে এসেছি। লোকসভায় আমাদের ১৮ জন সাংসদ রয়েছে। তবে এবারের লড়াই আরও জোরদার।’ দিলীপের দাবি, গুজরাট অতি অবশ্যই প্রেরণা জোগাবে। যদি বিগত গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর ঘোরাই, তাহলে বোঝা যাবে সেবার কোনওরকমে মুখরক্ষা হয়েছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে গুজরাটের বিজেপি কর্মীরা। যার ফল এবারের এই ঐতিহাসিক জয়। রাজ্যের প্রেক্ষাপটে দিলীপের মন্তব্য, ‘বাংলার বিজেপি কর্মীরা গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন থেকেও অনেক শিক্ষা পেয়েছে। এখন আমরা জানি কিভাবে জনসমর্থনকে নির্বাচনি ভোটবাক্সে প্রতিফলিত করতে হয়। এর জন্য ইতিমধ্যেই চারজন পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বারবার বাংলায় আসছেন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং কর্মকুশলতা থেকে সংগঠন তৈরি এবং রাজনীতি করার শিক্ষা পাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা।’ একই প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার বলেছেন যতদিন না বঙ্গ জয় সম্পূর্ণ হবে, ততদিন সম্পূর্ণ হবে না বিজেপির জয়বৃত্ত। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গ জয়ের দিকে অবশ্যই কড়া নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তার একটা অবশ্য বড় কারণ তিনটি আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ওপরে। আর পশ্চিমবঙ্গের মতো অস্থির রাজ্য এখন বোধহয় কাশ্মীরও নয়। কাশ্মীরে যেভাবে দুর্বৃত্তায়ন স্তব্ধ করা হয়েছে ঠিক সেইভাবেই পশ্চিমবঙ্গেও কাজ করা প্রয়োজন। এর জন্য সবার প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মের রাজত্ব কায়েম করা দরকার।’ পাশাপাশি সুকান্ত’র বক্তব্য, ‘আমরা তৃণমূলের মতো লাঠালাঠির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। তাহলে তো হিমাচলে আমাদের সরকার ছিল। আমরা চাইলেই বিরোধী দলকে লাঠির ভয় দেখিয়ে ময়দান ছাড়া করে দিতে পারতাম। কারণ হিমাচল প্রদেশে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার পরিবর্তন হয় এটা তো আমরা জানতামই এবং জনমতও আমাদের পক্ষেই ছিল। সেই কারণে বিজয়ী দল কংগ্রেসের থেকে আমরা মাত্র এক শতাংশ ভোট কম পেয়েছি। বহু জায়গায় ১০০-২০০ ভোটে পরাজিত হয়েছে বিজেপি প্রার্থীরা। কিন্তু আমরা কোথাও অশান্তি গণ্ডগোল বা মারামারি রাজনীতিতে জড়াইনি। আমরা জোর করে জয়লাভে বিশ্বাস করি না। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। পরাজয়কে স্বীকার করে নিয়ে আগামীর জন্য কোমর বাঁধি।’
তবে উভয় নেতাই স্বীকার করেছেন উন্নয়নের প্রভাব। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হতে পারে শুধু উন্নয়নই। দিলীপ ও সুকান্ত মজুমদার দুজনেই মনে করিয়েছেন, গুজরাট হল উন্নয়নের মডেল। সেখানে বাংলায়, উন্নয়নের চাকা স্তব্ধ হয়ে আছে। দুর্নীতি আর কালো বাজারিতে ভরে রয়েছে চারিদিক। এই জায়গা থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের মডেল অর্থাৎ গুজরাট মডেল। বাংলার সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে গুজরাটের মতো উন্নয়ন চাইলে বাংলায় অবশ্যই বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আমাদের কর্মীরা একনিষ্ঠভাবে এর জন্য কাজ করে চলেছে। আমাদের বিশ্বাস আগামী লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের মডেলেই ভরসা রাখবে বঙ্গবাসী’, এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন এবং বর্তমান সভাপতি, উভয়েই।