দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জঃ করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। চলছে লকডাউন। বন্ধ জামাকাপড়, জুতো, সাজগোজের সামগ্রী সহ বিভিন্ন রকমারি জিনিসের দোকান। ফলে এবারে রায়গঞ্জ শহরে দেখা মিলছে না চৈত্র সেলের বাজার। প্রতিবছর এই সময় রায়গঞ্জের বিদ্রোহী মোড় থেকে মোহনবাটি পর্যন্ত জামাকাপড়, জুতো সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। কিন্ত এবছর লকডাউনের জেরে সব বন্ধ। তাই নিজেদের পেটের ভাত জোগাড়ের জন্য এবার মাস্ক ও গ্লাভসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তাঁরা। রায়গঞ্জ শহর ও শহরতলি এলাকার দর্জিদের থেকে তৈরি করা মাস্ক ও গ্লাভস নিয়ে এসে বিক্রি করছেন ওই হকাররা। প্রতিবছর যাঁরা এই সময় জামাকাপড় বিক্রি করেন তাঁরাই রুজি রোজগার করার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস রুখতে মানুষের হাতে এই প্রয়োজনীয় সুরক্ষার জিনিসগুলি তুলে দিচ্ছেন।
প্রতিবছর এই সময় রায়গঞ্জের লাইনবাজার, মোহনবাটি, পাবলিক বাসস্ট্যান্ড, বিবেকানন্দ মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় এতটাই ভিড় হত যে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়তেন সাধারণ মানুষ। ভিড়ে শহরে যানজট তৈরি হত। এই ভিড় এড়াতে গত দু’বছর হল রায়গঞ্জ পুরসভা চৈত্র সেলের জন্য অস্থায়ী বাজার করে দেয়। খুব সামান্য টাকা দিয়ে সেই বাজারে স্টল নেওয়ার সুযোগ পেতেন রায়গঞ্জ শহরের প্রায় ২০০ হকার। জামাকাপড়, জুতো সহ বিভিন্ন ঘর সাজানোর জিনিসের পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসতেন। প্রতিদিন গ্রামগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার মানুষ কেনাকাটা করতে আসতেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলত কেনাকাটা। কিন্ত এবছর পরিস্থিতি একদম আলাদা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে লকডাউন। বন্ধ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া সব দোকান।
মানুষের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ও গ্লাভসের চাহিদা তুঙ্গে। তাই যাঁরা প্রতিবছর এই সময় জামাকাপড় সহ অন্যান্য পসরা রাস্তার ধারে সাজিয়ে বসতেন তাঁরাই এবছর দুবেলা অন্ন জোগানের জন্য বিক্রি করছেন মাস্ক ও গ্লাভস। ওষুধের দোকানে মাস্ক ও গ্লাভস না পাওয়ায় রাস্তার ধারে এগুলির পসরা সাজিয়ে বসছেন হকাররা। ১৫-২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। গ্লাভস বিক্রি হচ্ছে ২৫-৪০ টাকার মধ্যে। লোকজন খুব কম বের হওয়ায় সেভাবে বিক্রি নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সারাদিনে ফাঁকা বাজারে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছে তাঁদের।
লাইন বাজারের এক হকার গোপাল সাহা বলেছেন, ‘প্রতিবছর এই সময় জামাকাপড় বিক্রি করতাম। ভালোই বিক্রি হত। কিন্ত এবছর মাস্ক ও গ্লাভস বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছি। জানিনা আর কতদিন চলবে লকডাউন।’ মোহনবাটির এক হকার বিষ্ণু হালদার বলেন, ‘একটা মাস্ক বিক্রি করে ৫-৭ টাকা আয় হয়। সারাদিনে ২৫-৩০টি মাস্ক এবং ৮-১০টি গ্লাভস বিক্রি হচ্ছে। যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে ভাত ও ডালের সংস্থান হচ্ছে।’