রায়গঞ্জ: রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর ফ্ল্যাটের নীচে সোমবার রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোম কোয়ারান্টিনের নোটিশ সাঁটানো হয়েছে। তবে পোস্টার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে আবারও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। এজন্য সস্তা রাজনীতিকেই দায়ী করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। সরকারি নির্দেশ মেনেই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন রায়গঞ্জের বিডিও। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে বাইরে থেকে আসা ব্যক্তির বাড়িতে হোম কোয়ারান্টিনের নোটিশ লাগাতে হবে। এমন নির্দেশ মেনে গত ৪ এপ্রিল সকালে পঞ্চায়েতের স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং রাতে পুলিশ ও স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাদের শত চেষ্টাতেও মন্ত্রীর বাড়িতে পোস্টার লাগানো যায়নি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও রায়গঞ্জ থানার আধিকারিকদের মন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবাণে বিদ্ধ হতে হয় বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ কলকাতা থেকে রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুর এলাকার ফ্ল্যাটে আসেন দেবশ্রী। ২৩ মার্চ তিনি দিল্লি থেকে কলকাতা এসেছিলেন। এরপর ২ এপ্রিল লকডাউন নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে এবং মাস্ক বিলি করার জন্য রায়গঞ্জ শহরের রাস্তায় নামেন মন্ত্রী। ভিন রাজ্য থেকে আসার পর হোম কোয়ারান্টিনে না থেকে রাস্তায় বের হওয়াকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং না মানা, হোম কোয়ারান্টিন অগ্রাহ্য করা সহ একাধিক অভিযোগ এনে রাতেই রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন রায়গঞ্জ পুরসভার পুরপিতা সন্দীপ বিশ্বাস রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার ও রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নজরে আসতেই ৪ এপ্রিল সকালে স্বাস্থ্যকর্মীরা মন্ত্রীর বাড়িতে হোম কোয়ারান্টিনের নোটিশ লাগাতে যান। কিন্ত মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী তাদের ফিরিয়ে দেন। পোস্টার লাগাতে দেননি বলে অভিযোগ।
রায়গঞ্জ থানার আইসি সুরজ থাপা ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ আবারও মন্ত্রীর ফ্লাটে ওই নোটিশ সাঁটাতে গেলে মন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। নোটিশ না লাগিয়েই তাঁরা ফিরে আসেন। মন্ত্রী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘নিয়ম মেনেই আমি হোম কোয়ারান্টিনে রয়েছি। আমাকে হেনস্থা করার চক্রান্ত শুরু করেছে।’ স্বাস্থ্য আধিকারিক ও রায়গঞ্জ থানার আধিকারিক জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পেশ করেন। এরপরেই সোমবার রাতে দেবশ্রী চৌধুরীর ফ্ল্যাটের বাইরে হোম কোয়ারান্টিনের নোটিশ সাঁটানো অবস্থায় দেখা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর নামে লাগানো ওই নোটিশ তাঁকে ৩১ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত হোম কোয়ারান্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাতের অন্ধকারে পোস্টার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী জানিয়েছেন, নির্দেশ মেনেই মন্ত্রী ২৩ মার্চ থেকে হোম কোয়ারান্টিনে রয়েছেন। এদিন তাঁর ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্ত তাঁকে বাড়িতে আটকে রাখার জন্য প্রশাসন এই নোটিশ রাতের অন্ধকারে ঝুলিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দলের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবো। বিজেপিকে চাপে রাখতেই এই কৌশল নিয়েছে প্রশাসন। কিন্ত তা সফল হবে না।’ রায়গঞ্জের বিডিও রাজু লামা জানান গত ৩১ মার্চ কলকাতা থেকে রায়গঞ্জে এসেছেন। সেই হিসেব করেই ওই হোম কোয়ারান্টিনের নোটিশ লাগানো হয়েছে। রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘আমি হোম কোয়ারান্টিনের নিয়ম মেনেই রয়েছি। এরপরেও আমার ফ্ল্যাটের বাইরে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানতে চাইছেন না। এসব হতে দেওয়া যায় না।’