খোকন সাহা, বাগডোগরা : কথায় বলে- বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের দৌরাত্ম্যে উলটে পুলিশেরই ৭২ ঘা খাওয়ার উপক্রম। বাগডোগরা থানার চার পুলিশকর্মী কিছুদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁদের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই পুলিশকর্মীদের লালা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তাঁদের মাধ্যমে যে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই তা পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দারা তা মানতে চাইলে তো! সাধারণত কেউ পুলিশকে ঘাঁটানোর সাহস দেখায় না। কিন্তু করোনার আতঙ্ক বাসিন্দাদের এতটাই চেপে ধরেছে যে, তাঁদের মন থেকে পুলিশকে নিয়ে বরাবরের সেই ভয়ডর আপাতত ফক্কা। বাড়ি থেকে ওই পুলিশকর্মীদের উঠে যেতে ভাড়াবাড়ির মালিকরা রীতিমতো ফরমান জারি করেছেন। যাঁরা ওই পুলিশকর্মীদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন তাঁদের ওই কাজ করতে বারণ করা হচ্ছে। এসবের জেরে পুলিশের মনোবল অনেকটাই ভেঙেছে। কোনও রাখঢাক না করে বাগডোগরা থানার ওসি দীপঙ্কর গোস্বামী বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তাঁর কথায়, হাসপাতালে থাকা আমাদের চার কর্মীরই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু বাসিন্দারা তা মানতে চাইছেন না। বাড়িওয়ালারা ওই কর্মীদের ভাড়াবাড়ি ছেড়ে ব্যারাকে গিয়ে থাকতে বলছেন। যে পরিচারিকা আমার বাড়িতে কাজ করেন তিনি অন্য কোথাও কাজ করতে পারবেন না বলে তাঁকে বলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে আমরা বর্তমানে রাতদিন এক করে কাজ করলেও তাঁদের এই ব্যবহার মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাতে ভ্যানে ডিউটি করার সময় বাগডোগরা থানার এক সহকারী সাব-ইনস্পেকটর, দুজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও গাড়ির চালক অসুস্থ হয়ে পড়েন। হালকা জ্বর সহ তাঁদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাঁরা বাগডোগরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। চিকিত্সকের পরামর্শে শুক্রবার তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাঁদের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি) রোগীদের চিকিত্সার জন্য অধিগ্রহণ করা কাওয়াখালির বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই পুলিশকর্মীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা জানতে চারজনের লালার নমুনা পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের ভাইরাস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি (ভিআরডিএল)তে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। শনিবার ছুটি দিয়ে তাঁদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওযা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, হোম কোয়ারান্টিনে থাকা ওই পুলিশকর্মীরা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। শনিবার দমকল বাগডোগরা থানার ভবন সহ সমস্ত যানবাহনকে জীবাণুমুক্ত করে।
কিন্তু ওই কর্মীদের কেন্দ্র করে এলাকায় বর্তমানে যে কাণ্ড শুরু হয়েছে তা পুলিশকে রীতিমতো বিপাকে ফেলেছে। ওই পুলিশকর্মীরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেগুলির মালিকরা ওই কর্মীদের পরিবারগুলিকে সেখান থেকে দ্রুত উঠে যেতে বলেছে। পরিবারগুলিকে পুলিশ ব্যারাকে গিয়ে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু একে তো ব্যারাকে জায়গা নেই, তার উপর পরিবার নিয়ে ব্যারাকে থাকাও সম্ভব নয়। যে পরিচারিকারা ওই পুলিশকর্মীদের বাড়িতে কাজ করেন তাঁদের সমানে হুমকি দেওযা হচ্ছে। তাঁরা ওই পুলিশকর্মীদের বাড়িতে কাজ করলে তাঁদের অন্য কোথাও কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে বাসিন্দারা জানিয়ে দিয়েছেন। এর জেরে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলি খুবই সমস্যায় পড়েছে। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের জেরে বহিরাগতদের আগমন রুখতে বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই বাগডোগরার বিভিন্ন গলির মুখগুলি বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। বহিরাগত কেউ এলে তাঁদের রীতিমতো হয়রান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।