মুরতুজ আলম, চাঁচল : করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউন চলছে। লকডাউনের জেরে মৃত স্ত্রীর মুখখানা শেষবারের মতো দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন ভিনরাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত তাঁর স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল-২ ব্লকের জালালপুরে।
চাঁচল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম সেরিনা খাতুন (২০)। ঠিক সময়ে ও যথাযথ চিকিৎসা হলে ওই বধূকে হয়ত বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু করোনার আতঙ্কে প্রতিবেশীদেরও তেমন সাড়া মেলেনি। ওই বধূর তিনমাসের এক সন্তান রয়েছে। ওই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দিদিমা জাহেদা বেওয়া। সেরিনার শ্বশুরবাড়ি ওই ব্লকেরই চন্দ্রপাড়া পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়া গ্রামে। সেরিনা দিনকয়েক ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাপের বাড়ি জালালপুর চলে এসেছিলেন। তারপর আচমকাই শুরু হয় রক্তক্ষরণ। তাঁকে স্থানীয় মালতীপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। কিন্তু অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই মারা যান ওই বধূ। স্বামী নুরজামাল ভিনরাজ্যে রয়েছেন। স্ত্রীর মৃত্যু খবর মোবাইল মারফত পান। কিন্তু কিছু করার নেই। সারা দেশে চলছে লকডাউন। শত চেষ্টা করেও আসতে পারবেন না। করোনার জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভিনরাজ্যে থাকা শ্রমিকদের পরিবারের অনেকেই। ওই বধূর গর্ভকালীন সমস্যায় রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ধারণা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবছর আগে চাঁচলের গোয়ালপাড়া এলাকায় বিয়ে হয়েছিল সেরিনার। স্বামী নুরজামাল ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। মাস দুয়ে আগে বাড়ি ফেরার পর ফের তিনি দিল্লি চলে যান। সেখানেই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। দিনকয়েক আগে শ্বশুরবাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সেরিনা। স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে ফিরতে পারেননি নুরজামাল। সেখানে বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি জাহেদা বেওয়া রয়েছেন। তাই শিশুসন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি জালালপুরে চলে আসেন সেরিনা। লকডাউনের জেরে এখন একে অন্যের বাড়িতে যাতায়াত কার্যত বন্ধ। পাশাপাশি বধূর জ্বর হয়েছে জেনে প্রতিবেশীদের একাংশও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বাড়িতে রয়েছেন বধূর মা ফতেমা বেওয়া ও ভাই শেখ ভুটু। তাঁরা স্থানীয় দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাইয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। এরপর বুধবার রাতে সেরিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে মালতীপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বধূকে বাঁচানো যায়নি। যদিও সেরিনার জ্বরের বিষয়টি পরিবারের লোকজন মানতে চায়নি।
এদিকে কাজ না থাকলেও ট্রেন ও উড়ান বন্ধের জেরে ভিনরাজ্যে আটকে পড়েছেন মহকুমার বহু শ্রমিক। শ্রমিকরা যেমন নিজেরা সংকটে পড়েছেন, পাশাপাশি উদ্বিগ্ন তাঁদের পরিবারও। বাড়িতে কারও স্ত্রী, কারও সন্তান অসুস্থ জেনেও ফিরতে পারছেন না তাঁরা। এদিন যেমন স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ফিরতে পারছেন না নুরজামাল। দিল্লি থেকে ফোনে নুরজামাল কোনওক্রমে বলেন, সংসারে অভাব ছিল। কিন্তু জীবনে এমন অসহায় অবস্থায় কোনওদিন পড়তে হবে, ভাবতে পারিনি। চাঁচলের আইসি সুকুমার ঘোষ বলেন, ময়নাতদন্তেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। বধূর জ্বর ছিল এবং বমিও করছিলেন বলে জানা গিয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।