রায়গঞ্জ: বাংলায় ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক মহিলাকে ১,৫০০ টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে দেব। বুধবার রায়গঞ্জে (Raiganj) জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে মহিলা কংগ্রেসের সাংগঠনিক সভায় যোগ দিয়ে এমনটাই বললেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দীপা দাশমুন্সি (Deepa Dasmunsi) জানান, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে যে ম্যানিফেস্টো বের করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, তাঁরা যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে প্রতি মাসে মহিলাদের ৫০০ নয় ১,৫০০ টাকা দেওয়া হবে। হিমাচল প্রদেশে তাদের সরকারই হবেই। এটা যদি হিমাচল প্রদেশে চালু হতে পারে, তবে বাংলায়ও হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে প্রতি মাসে টাকা দেওয়া কোনও দান, খয়রাতির ব্যাপার নয়। এর পেছনে কারণ রয়েছে। আমরা মানুষকে বলব। তবে আমাদের আগে শুরু করতে হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পেছনে যদি কোনও অসৎ উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তা অপমান করা নয়। তবে এই প্রকল্পকে চালু রাখতে হবে। আমরা বাংলায় দেখেছি অনেক প্রকল্প চালু হয়েছে, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
তাঁর বক্তব্য, ‘বাংলার উন্নয়নের জন্য যে টাকা আসছে সেই টাকা উন্নয়ন খাতে ব্যয় হচ্ছে না। ছোট ছোট খাতে টাকা দিতে গিয়ে সরকারের ভাড়ার শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কর্মচারী ও শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য টাকা পাবে না। এটা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সরকারের হিসেব করা দরকার, বাজেটের কোন খাতে টাকা আসছে আর কোন খাতে তারা টাকা দেবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত এ বিষয়ে স্বচ্ছ হিসেবপত্র সরকারের থেকে পাব ততক্ষণ পর্যন্ত ছোটো অনুদানগুলি সাময়িক উপকারে লাগলেও সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী উপকারে লাগবে না।’ এদিন রাজ্য ভাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দাবি যে কেউ করতে পারেন। কারও যদি মনে হয়ে থাকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা পৃথক রাজ্য করতে হবে, এটা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে সামনে এসেছে। কিন্ত একটা পৃথক রাজ্য করতে গেলে তার অনেক নিয়ম আছে। সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি যখন গোয়ালপোখরের বিধায়ক ছিলাম, সেই সময় বিধানসভায় একটা দাবি তুলেছিলাম। উত্তরবঙ্গের মানুষের মাথাপিছু খরচ দক্ষিণবঙ্গের মানুষের থেকে অনেক কম। উত্তরবঙ্গের মানুষকে চিরকাল অবহেলায় রাখা হয়েছে। এটা বাম আমলেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তৃণমূল যতই বলুক উত্তরবঙ্গের জন্য তারা কাজ করছে তা আদৌ কিছু হচ্ছে না। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং উত্তরবঙ্গের মানুষদের জন্য এইমস হাসপাতাল দিয়েছিলেন, কিন্তু এই সরকার দক্ষিণবঙ্গে টেনে নিয়ে গিয়েছে। বহু ব্যাপারে অবহেলা আছে। তাই উত্তরঙ্গের মানুষের এই দাবিকে অস্বাভাবিক বলা যায় না। সেই সময় আমি বলেছিলাম, রাজ্যপালের হাতে অতিরিক্ত ফান্ড দিয়ে যে অসাম্যতা আছে তা দূর করতে হবে। এটা যদি হয় তবে উন্নয়ন হবে, পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। এটার অনেক পদক্ষেপ আছে।’
তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার যদি উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের বিষয়ে চিন্তা করে তবে বাংলা ভাগের ব্যাপার আসবেই না। বাংলা ভাগ করতে গেলে অনেক পরিকাঠামো দরকার। অনেক অর্থের দরকার। অনেক চিন্তাভাবনা দরকার। এগুলো না করে বাংলা ভাগের দাবি ওঠানো ঠিক নয়। এটা কেন্দ্র ও রাজ্যকে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিন দীপা দাশমুন্সি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ মহিলা কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী সুব্রতা দত্ত, জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত, জেলা সভানেত্রী নারগিস খাতুন সহ আরও অনেকে। জেলার বিভিন্ন ব্লকের মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এদিনের সাংগঠনিক সভায়।
আরও পড়ুন : নেশামুক্তি, দেশ গঠনের বার্তা দিতে বিএসএফের সাইকেল র্যালি