রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলের (Baikunthapur Forest) জমিতে তো জমি মাফিযাদের নজর পড়েছিল আগেই। এবার জঙ্গল লাগোয়া খাস জমিতেও থাবা বসিয়েছে দালালরা। একদম জঙ্গলের গাঁ-ঘেষে থাকা জমি, পুকুর চুরি করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির আশিঘর সংলগ্ন নেপালিবস্তি এলাকার পুকুর বিক্রি হয়েছে কোটি টাকায়। জমি বিক্রি হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকায়। শুধুমাত্র ১০ টাকা, ২০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বিঘার পর বিঘা খাস জমি।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে চোখ কপালে তুলে দেওয়া তথ্য। ওই এলাকায় সরকারি জমি দখল করে একের পর এক রিসর্ট, বাড়ি, ঘর, গুদাম তৈরি হয়েছে। তবে সরকারি সমীক্ষায় খাস জমি দখলের রিপোর্ট আসার পরেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। স্থানীয় দালালদের মদতে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল ঘেঁষা ওই জমি ও পুকুরে একাধিকবার হাত বদল হয়েছে। কিন্তু হেলদোল নেই জেলা প্রশাসনের। বন দপ্তর যেভাবে নিজেদের জমি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছে, সেভাবে খাস জমিও দখলমুক্ত করা হবে কি না, তা নিযে প্রশ্ন উঠছে। এই বিষয়ে জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরনেনি। মেসেজেরও জবাব দেননি তিনি।
শিলিগুড়ির আশিঘর ফাঁড়ির ফারাবাড়ি, নেপালিবস্তি এলাকায় খাস জমি এবং বন দপ্তরের জমি দখল করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এলাকারই জমি মাফিযারা সাদা কাগজে এবং স্ট্যাম্প পেপারে লিখে লক্ষ লক্ষ টাকায় সেসব জমি বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ। একদম জঙ্গলের কোর এলাকায় তৈরি হয়েছে রিসর্ট। ওই রিসর্টের পাশেই একটি ফাঁকা জমি খুঁড়ে পুকুর তৈরি করা হয়েছে। খাস জমির ওই মাটি কয়েক বছর আগে ফাড়াবাড়ির একটি ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। ওষুধ কোম্পানি গুদাম তৈরির সময় কাজে লেগেছে সেই মাটি।
পুকুরের মাটি বিক্রি তো হল, সেইসঙ্গে ওই পুকুরটিও বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। সৌজন্যে জমি মাফিয়ারা। বউবাজার সংলগ্ন এলাকার কয়েকজন মিলে ওই পুকুর কেন বেচা করেছেন। বর্তমানে ওই পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। পুলিশ, প্রশাসন থেকে নেতাদের আনাগোনা ওই রিসর্টে। রিসর্টের মালিক শাসকদল ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ ব্যবস্থাও নেয় না।
সম্প্রতি বন দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল ওই এলাকায়। কতটা বন দপ্তরের জায়গা আর কতটা খাস জমি, সেসব খতিয়ে দেখা হয়। ওই সময় দেখা যায়, ওই রিসর্টটি সরকারি খাস জমির ওপরে রয়েছে। সেইমতো সমীক্ষা রিপোর্ট সরকারি খাতায় নথিভুক্তও করা হয়। কিন্তু রিসর্ট মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় পুরো বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। এদিকে, পুরো রিসর্টটি জঙ্গল ঘেঁষা হওয়ায় প্রায়ই বন্যজন্তুরা খাবারের লোভে রিসর্ট সংলগ্ন এলাকায় চলে আসছে। সপ্তাহখানেক আগেই একটি হাতি চলে এসেছিল ওই রিসর্টের সামনে। খবর পেযে বন দপ্তর গিয়ে হাতিটিকে গভীর জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়েছে।
বন্যপ্রাণীদের করিডরে এভাবে রিসর্ট, ঘরবাড়ি হলেও প্রশাসন কেন পদক্ষেপ করছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একদিকে মন্ত্রীরা বলছেন জঙ্গলকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী আশিঘর এলাকার জমি মাফিযাদের নিয়ে তিতিবিরক্ত। কিন্তু এরপরেও জমি মাফিয়ারা বহালতবিয়তে কাজ করায় প্রশাসনিক দুর্বলতাই সামনে আসছে।
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ ।
আরও পড়ুন: Raju Bista | সীমান্তে গোরু পাচার রুখতে এবার ময়দানে সাংসদ