নাগরাকাটা: হাজারও সংকটের ঘূর্ণাবর্তের মাঝেও চলতি বছর ভারতীয় চায়ের রপ্তানি ক্রমশ বাড়ছে। টি বোর্ড প্রকাশিত এবছরের প্রথম ৯ মাসের খসড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে এখনও পর্যন্ত ২৩ মিলিয়ন কিলোগ্রামেরও বেশি চা রপ্তানি হয়েছে। চা মহলের আশা গোটা বছরের পূর্ণাঙ্গ হিসেব পেশ হলে তা ২২৫ মিলিয়ন কিলোগ্রামের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
শ্রীলঙ্কান সংকটকে পুঁজি করে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এলাকাগুলিতে ভারতীয় সিটিসি চায়ের রপ্তানি এবার ৯ মাসের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম বেশি। ফলে এর ফায়দা সিটিসি চা উতপাদক ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা বাগানগুলিও পরোক্ষভাবে পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান। তবে রপ্তানির এমন ফিল গুড আবহেও ভারতীয় চা শিল্পের জয় ধ্বজা বহনকারী দার্জিলিং(Darjeeling) চায়ের জন্য কিন্তু কোন সুখবর নেই। পাহাড়ের চায়ের মোট রপ্তানি নিয়ে আলাদা করে কোনও সরকারি তথ্য প্রকাশিত হওয়ার রেওয়াজ নেই। তবে জার্মানি দার্জিলিং এর অর্থোডক্স চায়ের অন্যতম বড় ক্রেতা। টি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সেই জার্মানিতে এবার গত বছরের চেয়ে রপ্তানি কমে গিয়েছে। ২০২১ এর প্রথম ৯ মাসে যা ছিল ৭ মিলিয়ন কিলোগ্রামের সামান্য বেশি সেটা এবছর দাঁড়িয়েছে ৬.২৭ মিলিয়ন কিলোগ্রামে। রপ্তানিকারক সংস্থাগুলি জানাচ্ছে নেপাল চায়ের দাপটে দার্জিলিং চায়ের কোনঠাসা অবস্থা কেটে যাওয়ার কোনও লক্ষণই নেই।
ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অংশুমান কানোরিয়া বলেন, দেশের রপ্তানী বাড়ছে। এর থেকে ভালো আর কিই বা হতে পারে। আশা করছি বছর শেষে ওই পরিমান ২২৫ মিলিয়ন কিলোগ্রামের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলতে পারবে। তবে দার্জিলিং চায়ের জন্য কোন সুখবর নেই। সরকারী সাহায্য না পেলে পাহাড়ের চা শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল।
ক্ষুদ্র চা চাষীদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, রপ্তানী বৃদ্ধি পাওয়া শুভ সঙ্কেত। সাথে নতুন বাজারও তৈরি হচ্ছে। এখন এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক এগোলে তবেই দীর্ঘমেয়াদী সুফল মিলতে পারে। বিজয়ের সংযোজন, টি বোর্ড আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫০ ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন কিলোগ্রাম রপ্তানীর যে লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করেছে তা অসম্ভব কিছু নয় বলেই মনে করি। তবে ক্ষুদ্র চা চাষীরা এখনো কাঁচা পাতার ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে না এটাই বড় আক্ষেপ।
টি বোর্ডের তথ্য বলছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া, ইউক্রেন, কাজাখস্থানের মতো দেশগুলিতে রপ্তানী হয়েছে ৩৮.০৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা। গত বছর যা ছিল ৩৩.৩৪ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। রপ্তানী বেড়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, তুর্কি, মিশরের মতো মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে। সিরিয়ার মতো দেশ ৫০ বছর পর ভারতের চা কেনা শুরু করছে। লেবানন হয়ে সিরিয়াতে ভারতের চা পৌঁছচ্ছে। পোল্যান্ড, হল্যান্ডের মতো ইউরোপের একাধিক দেশ ধীরে ধীরে হলেও ভারতীয় চায়ের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ নিখোঁজ রায়গঞ্জের শিক্ষক, উৎকন্ঠায় পরিবার