প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আগামী বছর ৯-১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শিখর সম্মেলন। তার আগে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জি-২০-এর সভাপতিত্বের দায়ভার গ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(PM Narendra Modi)। আগামী এক বছর অর্থাৎ ২০২৩-এর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত জি-২০’র সভাপতিত্ব করবে। সেই গৌরবকে তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী এক সপ্তাহ আলোকিত করা হবে দেশের ১০০টি স্মৃতিস্তম্ভ। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের চারটি স্মৃতিস্তম্ভ, কলকাতার মেটকাফ হল, ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং, মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি ও কোচবিহার রাজবাড়ি। এই স্মৃতিস্তম্ভগুলিতে জি-২০’র প্রতীক আলোকসজ্জার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে। দেশের অন্যান্য প্রধান রাজ্যগুলির মতো উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে মোট ৪টি জি-২০ অধিবেশন হবে পশ্চিমবঙ্গে। এই উপলক্ষ্যে আগামী সোমবার দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে অংশ নিতে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ১৬ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রতীকীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জি-২০-র সভাপতিত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল। আগামী এক বছরে ভারতের ৫০ শহরে ২০০টিরও বেশি সভা করা হবে। ডিসেম্বরেই এর প্রথম সভা (জি-২০ শেরপা সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে উদয়পুরে। এদিনটির গুরুত্ব স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির কাছে সর্বাত্মক মানবিক উন্নতিকল্পে মৌলিক ভাবনাধারা বদল করার ডাক দিয়েছেন। বছরখানেকের এই নেতৃত্বদানকালে ভারত বিশ্বজোড়া নিরাপত্তা তথা গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের বিপদ দূর করতে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় পদক্ষেপ নেবে ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যরক্ষার প্রচেষ্টা চালাবে। এছাড়াও আর্থিক মন্থরগতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও হবে প্রাথমিক কাজ, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এই উপলক্ষ্যে এদিনই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ‘টিম ইন্ডিয়া’কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই গৌরবময় মুহূর্ত উপলক্ষ্যে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, জি-২০ র সভাপতিত্ব পাওয়ার মর্যাদাকে তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১০০টি প্রাচীন স্মৃতিসৌধ, যার মধ্যে ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইটগুলিও থাকবে, সেখানে এক সপ্তাহের জন্য জি-২০ প্রতীক আলোকসজ্জার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা এই সমস্ত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভগুলিকে আলোকিত করা হবে। এদিন থেকে আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা আলোকিত থাকবে। অন্যান্য স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে রয়েছে দিল্লির কুতুব মিনার, হুমায়ুন মকবরা, লালকেল্লা এবং পুরানা কিলা, তামিলনাড়ুর ভেলোর ফোর্ট, হায়দরাবাদের গোলকুন্ডা দুর্গ সহ আরও অনেক। এছাড়াও এই তালিকার মধ্যে রয়েছে সারনাথ এবং ধামেক স্তুপ, মহাবালিপুরমের শোর মন্দির এবং হায়দরাবাদের চারমিনার, উত্তরাখণ্ডের জাগেশ্বর মন্দির, ওডিশার কোনার্ক মন্দির। গত মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি-২০-র থিমের উন্মোচন করেন। এবারের জি-২০-র লোগো হল একটি পদ্ম ফুল ও পৃথিবী। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’এর প্রেরণায় থিম রাখা হয়েছে- ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। এই সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভের উপরে জি-২০’র লোগোটি প্রতিফলিত হবে।
কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশে সব মিলিয়ে মোট ২১৯টি জি-২০ সমন্বয় বৈঠক হবে। এর মধ্যে ১৫০টি বৈঠক হবে দিল্লিতে। গোয়াতেও বেশ কয়েকটি বৈঠক আয়োজিত হতে চলেছে। পিছিয়ে নেই বাংলাও। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জি-২০-র ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বসবে কলকাতায়। আগামী ৯-১১ জানুয়ারি তিনদিন কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেলে নানা আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত বৈঠক হবে। এরপর বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত বৈঠক হবে ৮ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি। সেটিও আয়োজিত হবে বাইপাসের ধারের ওই পাঁচতারা হোটেলেই। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন ওই দু’দিন। তৃতীয় বৈঠকে পর্যটন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে। সেটি হবে এপ্রিল মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হোটেলে। পরে অগাস্ট মাসে আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা কলকাতায়৷
আরও পড়ুনঃ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে কড়া মন্তব্য, এবার ক্ষমা চাইলেন নাদাভ লাপিড