বর্ধমান: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশ জুড়ে জারি করা হয়েছে লকডাউন। চরম বিপাকে পড়েছেন ভিন রাজ্য ও ভিন জেলায় কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। এমনই প্রায় তিন শতাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের এখন ঠাঁই হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে। তাদের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত রাখলেন হবু দম্পতি অরিজিত পাল ও সঙ্গীতা ঘোষ। বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচের জন্য রাখা পুরো অর্থ দিয়ে মঙ্গলবার খাদ্য সামগ্রী কিনে দিলেন প্রশাসনের হাতে। হবু দম্পতির এমন মানবিক ভাবনার তারিফ না করে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা।
জামালপুর ব্লকের আবুজহাটি-১ গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি হবু দম্পতি অরিজিত পাল ও সঙ্গীতা ঘোষের। দুজনেই সমাজ কর্মী।পরিবারের লোকজন আগামী ১৭ এপ্রিল তাঁদের বিয়ের দিন ঠিক করেন। সঙ্গীতা ও অরিজিত এদিন বলেন, ‘লকডাউনের জেরে বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তাদের কাজও বন্ধ। এ কারণেই এই উদ্যোগ।’ বাড়ি ফেরার জন্য কয়েকশো শ্রমিক বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ ধরে হেটে আসছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ জামালপুরের মসাগ্রামে ও জৌগ্রামে পৌঁছায়। খবর পাওয়া মাত্রই খাবার ও পানীয় জল নিয়ে ক্লান্ত ও অভুক্ত শ্রমিকদের কাছে পৌছে যায় পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। এদিন থেকেই ৩৬৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক দিন কাটাচ্ছেন জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে।
হবু দম্পতি অরিজিত ও সঙ্গীতা জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন দুরাবস্থা দেখে তাঁরা ব্যথিত। তাই ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁরা মনস্থির করেছেন। সিদ্ধান্ত নেন বিয়েতে কোনওরকম অনুষ্ঠান করবেন না তাঁরা। অনুষ্ঠানের জন্য যে অর্থ খরচ হতো সেই দিয়ে পরিয়ায়ী শ্রমিকদের অন্নসংস্থানের জন্য খরচ করবেন। নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা সোমবার জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদারের কাছে গিয়ে জানান অরিজিত ও সঙ্গীতা। তাঁদের প্রস্তাব শুনে বিডিও সম্মতি না দিয়ে পারেন নি। এর পরেই মঙ্গলবার হবু দম্পতি প্রার্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী কিনে ব্লক প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘তাঁরা প্রকৃত অর্থেই মানবিক দৃষ্টান্ত গড়লেন। বিপাকে পড়ে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য উনারা যে স্বার্থ ত্যাগ করলেন তা এককথায় নজিরবিহীন। সবাই যদি অরিজিত ও সংগীতার দেখানো পথে হাঁটেন তাহলে লকডাউনের মধ্যে আরো বহু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া যাবে।’