নয়াদিল্লী: একজন রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অন্যজন খোদ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। বুধবার সংসদে বুলেট ট্রেন নিয়ে মারকাটারি তর্জায় মুখোমুখি বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন দুজন। ভারতের মাটি বুলেট ট্রেন চলাচলের যোগ্য কি না তা নিয়ে উত্তপ্ত বাদানুবাদে মাতলেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। শাসক বনাম বিরোধী শিবিরের এই ধুন্ধুমার লড়াই শান্ত করতে গিয়ে রীতিমত বেগ পেতে হল অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে৷
বিতর্কের সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে, যখন লোকসভায় রেল বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান রুহি দাবি করেন, ভারতের মাটি বুলেট ট্রেন চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়৷ এদিন রেল মন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ে একই দাবি জানান তৃণমূলের দলনেতা, বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর দাবি ছিল, জাপানে যেমন বুলেট ট্রেন চলে, ভারতে তা চালানো কখনই সম্ভব নয়। তাই এখানকার ট্রেনকে বুলেট ট্রেন না বলে হাই স্পিড ট্রেন বলাই ভালো। বলাবাহুল্য মোদি সরকারের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ বুলেট ট্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এহেন মন্তব্য মেনে নিতে পারেননি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী।
বুধবার তাঁর জবাবি ভাষণে তৃণমূল শিবিরকে তীব্র ভাবে নিশানা করেন রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব৷ তিনি বলেন, ‘বিরোধী সাংসদদের কয়েকজন বলেছেন, ভারতের মাটি বুলেট ট্রেন চলার উপযুক্ত নয়। এটা অত্যন্ত লজ্জার কথা৷ যারা প্রতিদিন মুখে ‘মা মাটি মানুষে’র কথা বলে, তারাই কিনা মা কে বিশ্বাস করে না, মাটিকে বিশ্বাস করে না-কেমন ধারার মানুষ এরা?’ বলতে বলতে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়েন বৈষ্ণব৷ নিজের টেবিলে ঘুষি, চাপড় মেরে প্রশ্ন তোলেন রেল মন্ত্রী৷ তাঁর এই আচরণের পরেই উত্তাল হয়ে ওঠে তৃণমূল বেঞ্চ। পালটা প্রতিবাদ জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গেই হইচই বাঁধায় শাসক বা ট্রেজারি বেঞ্চ৷ লোকসভা মুহূর্তে পরিনত হয় রণক্ষেত্রে। প্রবল হই হট্টগোলের জেরে সভার কাজ থমকে যায়৷ নিজেদের আসনে উঠে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদরা রেল মন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন৷ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম৷ রেল বিষয়টা আমি খারাপ বুঝিনা। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশে আমি ঘুরেছি ও রেলেই সফর করেছি। প্যারিস থেকে লন্ডন ইউরো রেলে যাত্রা করেছি, যেখানে ১০৫০ কিমি যাত্রা করা হয়েছিল তিন ঘন্টায়৷ এমন ট্রেন ভারতে চালানো সম্ভব, কিন্তু জাপানের বুলেট ট্রেন অন্য ধারার ট্রেন। তা কিন্তু ভারতে চালানো সম্ভব নয়৷’ এই সময়েই বুলেট ট্রেনের বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেল মন্ত্রী বৈষ্ণব৷ দুজনের মধ্যে শুরু হয় তীব্র বাদানুবাদ। তাকে কেন্দ্র করে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিশিকান্ত দুবে। তাতে যোগ দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। প্রবল তর্জায় উত্তপ্ত হয় সংসদ। উভয় পক্ষকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। পরে তাঁর মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।