বর্ধমান: বৃহস্পতিবার বিজেপির দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বর্ধমান শহরের ঘোড়দৌড়চটি এলাকা। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা পার্টি অফিসে ভাঙচুরও চালায় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ আরও কয়েকজন আহত হন। বিজেপির পতাকা লাগানো একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে, বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির আদি-নব্য বিবাদ চরমে ওঠায় উৎফুল্ল ঘাসফুল শিবির। তবে বিজেপির রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে বর্ধমানের পার্টি অফিসে হামলার ঘটনার তদন্ত হবে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দল ব্যবস্থা নেবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এদিন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ বেশ কিছু কার্যকর্তার বিরুদ্ধে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেন। এরপর বিক্ষুব্ধরা দলের জেলা কার্যালয় ভাঙচুর শুরু করেন। এতে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব কার্যালয়ে বন্দী হয়ে পড়ে। পরে কার্যালয়ের ছাদ থেকে বিক্ষুব্ধদের দিকে পালটা ইট, পাথর, আসবাবপত্রের ভাঙা টুকরো ছুড়তে থাকেন দলের অপর গোষ্ঠীর লোকজন। এরপরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ঘৌড়দৌড়চটি এলাকা। খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছোয়। লাঠিচার্জ করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে দুপক্ষই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকটি বাইক ও একটি ছোটগাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
আউশগ্রামের বিক্ষুব্ধ নেতা স্মৃতিকান্ত মণ্ডল জানান, দলের জন্য তাঁরা রক্ত ঝরিয়েছেন। মার খেয়েছেন। কিন্তু এতদিন যাঁদের সঙ্গে লড়াই করে এসেছেন, এখন তাঁদেরই দলে নেওয়া হচ্ছে। দলে পদ দিয়ে নেতা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্দিনের বিজেপি নেতা-কর্মীদের দূরে সরিয়ে দিয়ে তৃণমূল থেকে আসা নব্য বিজেপি লোকজনকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। আদি বিজেপি নেতা ও কর্মীদের কোনও কথা শোনা হচ্ছে না। বর্ধমানের বিক্ষুব্ধ নেতা বাপন দাস জানান, দলের দুর্দিনে তিনি জেলা বিজেপি সভাপতি সন্দীপ নন্দীকে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে ঘুরতেন। সেজন্য তৃণমূল কর্মীদের হাতে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ এখন দলের সুদিন আসায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাঁকে জেলা বিজেপি পার্টি অফিস থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বাপন দাসের দাবি, বিজেপিতে এখন স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। বিষয়টি নিয়ে সাংসদ থেকে শুরু করে দলীয় নেতৃত্ব, সবাইকে একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।
বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রবাল রায় বলেন, ’আমি বত্রিশ বছর দল করছি। যাঁরা এদিন আশান্তি করলেন তাঁরা কেউ বিজেপির কর্মী নন। তাঁরা কেউ চেনা লোক নন। বিজেপির কর্মী হলে আর যাই হোক জেলা কার্যালয়ে হামলা চালাতেন না।‘ প্রবালবাবু আরও বলেন, ‘পিকের টিম পয়সা দিয়ে এই হামলা করিয়েছে।‘ বিজেপি রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করবে বলে জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে।
যদিও বিজেপির অভিযোগ হাস্যকর বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু। তিনি বলেন, ‘ছেলে ভুলানো গল্প শোনাচ্ছেন বিজেপি নেতা। এদিনই বোঝা গিয়েছে বিজেপি আসলে কতটা উশৃঙ্খল দল।‘ দেবু টুডু দাবি করেন, ‘সিনেমা সবে শুরু হল। বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে বিজেপির গোষ্ঠী সংঘর্ষের আরও অনেক দৃশ্য রাজ্যবাসী দেখতে পাবেন।‘