রোম ও ওয়াশিংটন: ভরকেন্দ্র পালটে গিয়েছে করোনা ভাইরাসের। চিন থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে এবার সে হানা দিযেে ইতালিতে। সে দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে অভূতপূর্ব বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত গোটা দেশ লকডাউন করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ হয়েছে। উৎপাদন ও জরুরি পরিষেবা বাদে সব কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওযা হয়েছে।
মৃত্যু সংখ্যায় চিনকে আগেই টপকে গিয়েছিল ইতালি। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যাতেও শনিবার তারা সব দেশকে টেক্কা দিয়েছে। ওইদিন সেখানে মৃত্যু হয়েছেিল ৭৯৩ জনের, যা কিনা করোনার উৎস চিনের হুবেই প্রদেশেও কখনও ঘটেনি।
অজানা ভাইরাস কার্যত মৃত্যুপুরী বানিয়ে ছেড়েছে ইউরোপীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ইতালিকে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৫,৪৭৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৫৬০ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯,১৩৮। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চেয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। তিনি বলেছেন, সবচেয়ে খারাপের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

কাঁপুনি বেড়েছে স্পেনের। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২,২০৬ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩,০৮৯। গত ২৪ ঘণ্টায় সে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪৩৪ জনের। সোমবার স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যাঞ্চেজ। করোনা সংকটের জেরে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। গত ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে মৃত্যুর হার বেড়েছে ৩০ শতাংশ। সোমবার স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রককে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক করোনা ভাইরাস পরিসংখ্যান ওযেসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এই তথ্য জানায়।
অন্যদিকে, স্বেচ্ছায গৃহবন্দি হয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পর তিনি তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপকে কোভিড-১৯-এর কেন্দ্রস্থল ঘোষণার পর থেকেই সেখানে জীবনহানি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ফ্রান্সে ৬৭৪, ব্রিটেনে ২৮১, নেদারল্যান্ডসে ১৭৯, সুইজারল্যান্ডে ৯৮, জার্মানিতে ৯৪ জন সহ ইউরোপের প্রায় প্রত্যেকটি দেশে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। ইরানে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১,৬৮৫ জনের। সোমবার থেকে দেশজুড়ে কার্ফিউ ঘোষিত হয়েছে সৌদি আরবে। লকডাউন চালু হয়েছে নিউজিল্যান্ডেও।
কদিন আগে চিনে করোনা বিপর্যয়ের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। এখন ছেড়ে দে মা দশা সেই ট্রাম্পের। আমেরিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ম়ত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। সব মিলিয়ে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা নিউ ইয়র্কের। অন্য সব প্রদেশের তুলনায় সেখানেই সবচেযে বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন (১৫০)। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫,০৭৯। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ১৭৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মার্কিন মুলুকে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
বেজিংয়ে সংক্রমণ বাড়ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার বেজিং থেকে ১২টি শহরে আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করেছে প্রশাসন। বাইরে থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা। রবিবার বেজিংয়ে ৪৬ জন নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, যাঁরা সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। সংক্রমণের খবর মিলেছে চিনের গুয়াঝাউয়ে। যদিও করোনার উৎস হুবেই প্রদেশে গত পাঁচ দিনে নতুন করে সংক্রমণের খবর নেই।
২০১৯ সালের শেষদিকে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এ পর্যন্ত ১৯২টি দেশে ছড়িয়ছে কোভিড-১৯। চিনে মৃত ৩,২৭০ জন। রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪,৬৫৫ জনের। মোট আক্রান্ত প্রায় ৩,৩৮,০০০। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে প্রায় লক্ষাধিকমানুষ।