নয়াদিল্লি: বড়দিনেই মিলেছিল অশনি সংকেত। এফসিআরএ (ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট) রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে গিয়েছে মাদার টেরেজা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অফ চ্যারিটির। এই নিয়ে ব্যাপক জলঘোলা হচ্ছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। দিনের শেষে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও, বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির বিদেশ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করছিলেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তাঁদের অনুমান সত্য প্রমাণিত হল নতুন বছরের প্রথম দিনেই। দেশজুড়ে ১২ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার (এনজিও) এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এল, যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্সফাম ইন্ডিয়া ট্রাস্ট, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সহ ১২ হাজারেও বেশি খ্যাতনামা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এফসিআরএ লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি বিদেশ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার সুবিধা হারিয়েছে। এই তালিকায় ইন্দিরা গান্ধি ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস (আইজিএনসিএ) এবং ইন্ডিয়া ইসলামিক কালচারাল সেন্টারও রয়েছে।
বিদেশ থেকে অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির এই সরকারি লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের আবেদন না জানানোয় অথবা আবেদন বাতিল হওয়ার কারণে সংস্থাগুলির লাইসেন্সের মেয়াদ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শেষ হয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলেও বহু এনজিও আবেদন করেনি। শুক্রবার ছিল আবেদনের শেষদিন।
প্রশ্ন উঠেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে বিদেশি অনুদানের পথ বন্ধ করে কী বার্তা দিতে চাইছে মোদি সরকার? মনে করা হচ্ছে, বিষয়টি এতটাও সরল নয়। মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, কিছু অপ্রীতিকর সূত্র ধরেই তাদের এফসিআরএ লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। কয়েক দশক ধরে কলকাতা সহ দেশের নানা অংশে অনাথ শিশু, গরিব, অসুস্থদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি। সম্প্রতি গুজরাটে এই সংস্থার বিরুদ্ধে বলপূর্বক ধর্মান্তকরণের জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তারপরই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
অক্সফাম ইন্ডিয়া ট্রাস্টের ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা সমীক্ষায় বারবার সমালোচিত হয়েছে মোদি সরকার। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কোভিডের সময় কেন্দ্রের একাধিক অদূরদর্শী পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিল। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বরাবর সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে সরব হয়েছে। কেন্দ্রের ওই তালিকায় এমন সংস্থাগুলির সংখ্যাই বেশি, যারা কোনও না কোনও সময় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।