ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : স্টেডিয়ামের যেখানে সেখানে ফাটল। ফাটল ধরেছে বেশ কিছু পিলারে। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়ায় রং পর্যন্ত করা হয়নি। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেডিয়াম, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে (Kanchenjunga Stadium) ঢোকার মুখের গেট ভেঙে ঝুলছে। গেটের পিলার ভেঙে রয়েছে দীর্ঘদিন। স্টেডিয়ামের হলঘর, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, সেই হলঘরের পলেস্তরা ভেঙে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে অনেক জায়গায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের বেহাল দশার কথা লিখতে বসলে তা শেষ হওয়ার নয়। বেশ কিছু জায়গায় চাঙড় পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে। মাঠে নেই কোনও নিকাশি ব্যবস্থা। যার ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই মাঠে খেলা বাতিল করতে হয়। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। বছর খানেক আগেই রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছিল স্টেডিয়ামটি। কিন্তু এই এক বছরে কাজ একচুলও এগোয়নি। আর পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকার ফলেই দীর্ঘদিন ধরে বড় কোনও খেলাও হয় না এই স্টেডিয়ামে।
অথচ এই স্টেডিয়ামের বর্তমান হাল দেখে কে বলবে, এখানেই একটা সময় নেহরু গোল্ড কাপ প্রতিযোগিতায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন দেশের সুপারস্টাররা। পরবর্তীতে অল এয়ারলায়েন্স গোল্ড কাপ যেমন হয়েছে, তেমনি হয়েছে রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেট। এর মাঝে বেশ কয়েকবার ফ্রেন্ডশিপ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন শচীন তেন্ডুলকার, মহম্মদ আজহারউদ্দিনের মতো ক্রিকেটারও।
এই স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত বেশ কয়েকজন ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের কয়েকটি ডার্বি ম্যাচেরও সাক্ষী থেকেছে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। কিন্তু সেসব তো অতীত। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ফুটবল ও ক্রিকেট লিগ ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিলিগুড়ি পুরনিগমকে। কিন্তু এত বড় একটা স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ কি পুরনিগমের পক্ষে করা সম্ভব? প্রশ্ন উঠছে, কেন এক বছরেরও বেশি সময় পাওয়া সত্ত্বেও স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজে হাত পর্যন্ত দেওয়া হল না? অথচ, ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়ি পুরনিগম ভোটের আগে যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আশ্বাস দিয়েছিলেন, শীঘ্রই স্টেডিয়ামের কাজ করা হবে। কিন্তু সেসব কথার কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে।
এখন তো উন্নয়নের ব্যাটন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের হাতে। তিনি কী বলছেন? মেয়রের কথায়, পুরনিগমের পক্ষ থেকে স্টেডিয়ামকে সাজিয়ে তোলা হবে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি, মাঠ, ড্রেসিংরুম সবকিছুই নতুন করে সাজানো হবে। স্টেডিয়াম চত্বরকে নো হোর্ডিং জোন করা হবে। আধুনিক রূপ দেওয়া হবে।
উন্নয়নের আশায় রয়েছেন শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামী। বললেন, রাজ্য সরকার স্টেডিয়ামের দায়িত্ব নিয়েছিল। বছর গড়িয়ে যাওয়ার পর পুরনিগমের কাছে স্টেডিয়ামে মেরামতির দাযিত্ব গিয়েছে। তাই দেখা যাক কী কাজ হয়। একই আশার কথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ক্রিকেট সচিব মনোজ ভার্মার গলাতেও। বলেন, এরজন্য প্রচুর অর্থের প্রযোজন। মেয়র হয়তো কিছু করবেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি নান্টু পাল দাবি করেছেন, অনেকদিন আগেই এই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হওয়া উচিত ছিল। অনেকটা একই কথা ক্রিকেট কোচ জয়ন্ত ভৌমিকেরও। তাঁর কথায়, পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে যতটা আমরা আশা করেছিলাম, ততটা পাইনি।
আরও পড়ুন : একের পর এক পদক, ৬৬ বছর বয়সেও খেলা অন্তপ্রাণ বীণাপাণি