বুনিয়াদপুর: দুর্গার দুপাশে লক্ষ্মী-গণেশ ও কার্তিক-সরস্বতীকেই দেখে আসছে সকলেই। এবার একটু আলাদাভাবে দুর্গার অপর রূপ কাত্যায়নী রূপে দেখা গেল বংশীহারীর পূজা মণ্ডপে। দেবীর ভরপুর সংসারে নজর কাড়ছে এক নতুন সদস্য। দেবীর দশ হাতের বাঁ হাতের কোলে রয়েছে ছোট্ট গোপাল। শুধু তাই নয় সবার নজর কেড়েছে দেবীর সামনে সাজানো ৩৬ রকমের ভোগও।
ব্রজের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কাত্যায়নী আসলে দুর্গার আরেক নাম। আবার অনেকে বলে থাকেন, মা দুর্গার কাত্যায়নী রূপের পুজোয় নাকি মনস্কামনা পূরণ ও বৈবাহিক সম্পর্কে মোক্ষ লাভ হয়। বংশীহারী মহাবাড়ি উস্তর গ্রামের সর্দার পরিবারে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কাত্যায়নী পুজো। দুর্গাপূজার মতো ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠা মেনে চলবে এই পুজো। সোমবার ছিল পঞ্চমী। মনসা পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে কাত্যায়নী পূজার আরাধনা। মঙ্গলবার ষষ্ঠীতে ঘট বসিয়ে জাঁকজমকভাবে শুরু হয়েছে পূজার্চনা। দশমীর দিন অপরাজিতা পূজার শেষে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় ট্র্যাক্টরে করে ধুনুচি নাচের মধ্য দিয়ে গ্রামের পুকুরে মাকে নিরঞ্জন করা হয়।
পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী সহ আশেপাশের গ্রামেও উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছে। ষষ্ঠী থেকেই গ্রামবাসীরা পুজোয় মেতে ওঠেন। বুধবার ছিল কলা বউকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তমী পূজা। অষ্টমীতে প্রচুর গ্রামবাসী সহ আসেপাশের গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা অঞ্জলি দিতে আসেন। এদিন সকলের জন্য খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়।গৃহকর্তা ক্ষিতীশ চন্দ্র সরদার জানালেন, ৪১ বছর আগে অষ্টমীতে ঢাকার চুন্না গ্রামে থাকাকালীন মানত করেছিলাম। হোমিও প্যাকটিসে সফলতা পেয়ে তাই বাড়িতে মায়ের পূজা করছি। এবার দ্বিতীয় বর্ষ। শাস্ত্রে রয়েছে, ভারতের পশ্চিম দিকে মা অম্বার একটি রূপ হিসেবে পূজিতা হন কাত্যায়নী। বাংলায় কবে থেকে এই পূজো শুরু হয়েছিল ,তার ঠিক সময়কাল অনেকের অজানা। সাধারণত রাস পূর্ণিমার পরের অমাবস্যায় অগ্রহায়ন মাসে পঞ্চমী তিথি থেকে এই পূজার প্রচলন।
সরদার পরিবারের ছোট মেয়ে সুবর্ণা সর্দার জানালেন, বৃন্দাবনে কৃষ্ণকে প্রতি রূপে পাবার জন্য তার সখিরা এই দেবীর পূজা করতেন। তাই হয়তো মা এই রূপে পুজিতা হন। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সন্ধ্যায় গ্রামের পুরুষ ও মহিলা মায়ের সামনে ধুনুচি নাচ করেন। স্থানীয় পুরোহিত সমরেশ চক্রবর্তী বলেন, দুর্গাপূজার মতোই শাস্ত্র মতে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত মনসা পূজা, বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস, কলা বউ, চণ্ডীপাঠ, সন্ধি পূজা, অপরাজিতা পূজার মধ্যে দিয়ে দশমীর দিন পূজা সমাপ্ত হয়।