সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি : স্কুলঘরের টিনের চালে অজস্র ফুটো। বৃষ্টি হলেই জলে ভেসে যায় ক্লাসরুম। পড়ুয়াদের জন্য আনা বইপত্র বৃষ্টির জলে কয়েক দফা নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি বহুবার জেলা শিক্ষা দপ্তরে জানানো হলেও টিনের চাল বদলে ফেলা বা মেরামতি করার জন্য কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে শিলিগুড়ির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিয়াপাড়ার অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরে পড়ুয়ারা ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। আর শিক্ষক ও ক্লাসঘরের অভাব আগে থেকেই রয়েছে। সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে তথ্য ও নথি রয়েছে শিক্ষা দপ্তরের কাছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কী করে ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার একাধিক প্রাথমিক স্কুলে একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। সেখানেও পঞ্চম শ্রেণি চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে শোনা য়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক বালিকা গোলে বলেন,কোন বিদ্যালয়গুলিতে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা যাবে তা আগেই খোঁজ করে দেখে নেওয়া হয়েছিল। যাঁরা পঞ্চম শ্রেণি চালু করতে পারবেন বলে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন সেই স্কুলেই নতুন ক্লাস যুক্ত করা হয়। তবে পঞ্চম শ্রেণি চালুর পর কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে বা কী ধরনের পরিকাঠামোর অভাব নতুন করে উঠে আসছে তা অবশ্যই দেখা হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালযে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার আগে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যেসব স্কুলে উন্নত পরিকাঠামো রয়েছে সেখানেই পঞ্চম শ্রেণি চালু করা হবে। বাকি স্কুলগুলিতে ধাপে ধাপে পরিকাঠামো উন্নত করে সেখানে পঞ্চম শ্রেণি চালু হবে। কিন্তু পরিকাঠামোগত অভাব থাকা স্কুলগুলিতেও পঞ্চম শ্রেণি চালু করায় কথা উঠেছে। অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা পম্পা সরকার বলেন,প্রাক্ প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্লাস চালাতে ৬ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। কিন্তু স্কুলে আমরা চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছি। একটি ক্লাসরুমে বৃষ্টির জল ঢুকে যাওয়ায় অপর একটি ঘরে সবকটি শ্রেণির ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি আরও বলেন,বৃষ্টির জল ঘরে ঢুকে যাওয়ায় বইপত্র ঢেকে রাখতে হয়। যে ঘরে এখন ক্লাস হচ্ছে সেখানেও একই সমস্যা রয়েছে। এখন পঞ্চম শ্রেণি শুরু হয়েছে। কোথায় ক্লাস নেব বুঝতে পারছি না। স্কুলের চারপাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। যে কেউ ইচ্ছে হলেই স্কুলে ঢুকে পড়ছে। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলেন, এমনিই শিক্ষক সংখ্যা কম। তারপরও নানা সরকারি কাজ বছরভর করতে দেওয়া হয়। একজন অফিসিয়াল স্টাফ প্রয়োজন। শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় ২৫টি ও মহকুমা এলাকার ১৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালযে পঞ্চম শ্রেণি চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলের পরিকাঠামো বেহাল। শিলিগুড়ির ২ নম্বর ডাবগ্রাম জিএসএফপি স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। স্কুলের ক্লাস হয় বারান্দায়। শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের ভেতর থাকা বিদ্যালয়টির পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিন থেকে জানানো হলেও কাজের কাজ হয়নি। উদয়ন প্রাথমিক স্কুলে বর্তমানে মাত্র চারজন শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু স্কুলে সাতজন শিক্ষক প্রযোজন রয়েছে। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামাপ্রসাদ প্রাইমারি শিক্ষামন্দিরে আরও একটি ক্লাসরুম দরকার, শিক্ষক কম রয়েছে সেখানেও।