হরিশ্চন্দ্রপুর: হরিশ্চন্দ্রপুর দু’নম্বর ব্লকে বন্যাত্রাণ কেলেঙ্কারি নিয়ে এবারে আদালতের দ্বারস্থ হলেন হরিশ্চন্দ্রপুর সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। আগমী সপ্তাহে এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে উঠতে চলেছে বলে খবর। স্থানীয় সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। সেই বন্যায় এলাকার প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি না করে শাসক দলের মদতপুষ্ট সমর্থকদের অ্যাকাউন্টে এবং কিছু প্রভাবশালী নেতা এমন কি সরকারি কর্মচারীর অ্যাকাউন্টেও বন্যার ত্রাণের টাকা ঢোকানো হয়।
এ বিষয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বিডিওর কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, নানা টালবাহানা করে অবশেষে সেই তালিকা ব্লক কর্তৃপক্ষ দিলেও সেই তালিকাতে দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ব্যাংক এর বিবরণ ইচ্ছে করে মুছে দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। এরপরই হরিশ্চন্দ্রপুর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও এবং এসডিওকে পার্টি করে হাইকোর্টে মামলা করেন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। পাশাপাশি তারা অভিযোগ করেন যে ব্লকের এক গ্রুপ-সি কর্মচারীর অ্যাকাউন্টে এই বন্যা ত্রাণের ৬৯ লক্ষ টাকা ঢোকানো হয়েছে। তার বাড়ি যাবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক এলাকায়। কিভাবে হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বরের বাসিন্দা হয়ে দু’নম্বর এর বন্যাত্রাণের টাকা তার অ্যাকাউন্টে ঢুকলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি আরও অভিযোগ, ওই কর্মচারী চাকরি পাওয়ার কয়েক বছরের মাথায় তার গ্রামে বিশাল বাড়ি তৈরি করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে হরিশ্চন্দ্রপুরে বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতি-গ্রস্ত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই ক্ষতি-গ্রস্ত মানুষদের জন্য রাজ্য-সরকার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকে ২ দফায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতি-পূরণের টাকা বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে যুক্ত করে ফোরম্যান কমিটির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়। তারপরই অভিযোগ ওঠে এই তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা না দিয়ে বন্যাত্রাণের টাকা তৃণমূল মদদপুষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি, তৃণমূল নেতা এমনকি ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক, প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়-স্বজনের অ্যাকাউন্টে ফেলা হয়। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন-প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। এই মামলার জেরে হাইকোর্টের নির্দেশে বেশ কয়েকজন জন-প্রতিনিধির জেল পর্যন্ত হয়। এরপরই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বন্যা ত্রাণের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এলাকার কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং বামেরা। তাদের অভিযোগ, হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বরের মতই হরিশ্চন্দ্রপুর দু’নম্বর ব্লক এলাকাতেও ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। প্রধান মামলাকারী সিপিএমের জেলা কমিটির নেতা তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য শেখ খলিল বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে ওই ব্লকের বিডিওর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লক বিডিও বিজয় গিরি জানান, ‘কোন কর্মচারীর একাউন্টে কি ঢুকেছে তা আমার জানা নেই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটা আমি মহামান্য আদালতকে জানাবো।’
এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হজরত আলি জানান, আইন আইনের পথে চলবে। দল কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি এবং দেবে না। সম্পূর্ণ ঘটনাকে তীব্র কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি নেতা কিষান কেডিয়া। তিনি জানান, রাজ্যজুড়ে তৃণমূল দুর্নীতির আখড়া তৈরি করে ফেলেছে। গরিব মানুষের টাকা এইভাবে নয় ছয় করা হচ্ছে। মানুষ সবই দেখছে। আগামী নির্বাচনে এর যোগ্য জবাব দেবে।
আরও পড়ুনঃ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে খুনের অভিযোগ