হরিশ্চন্দ্রপুর: কয়েক মাস শান্ত থাকার পর ফের হরিশ্চন্দ্রপুরের (Harishchandrapur) আদিবাসী এলাকায় জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মাফিয়াদের মদতে হরিশ্চন্দ্রপুরে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের মাধ্যমেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সরকারি ভেস্ট হয়ে যাওয়া জমি। এই জমি বিক্রিতে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগ, মাফিয়াদের পেছনে রয়েছে শাসকদলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার প্রচ্ছন্ন মদত।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় থাকা গড়গুড়ি মাঠ। এই মাঠ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি বাসিন্দাদের। খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কয়েক মাস আগেই এই জমিকে দখলমুক্ত করতে তীর ধনুক হাতে আন্দোলনে নেমেছিলেন বাসিন্দারা। ভেঙে ফেলেছিলেন ওই মাঠে নির্মাণ হওয়া অবৈধ ঘরবাড়ি। সেই সময় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের শান্ত করে। এরপরে ওই জমি নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি।
অবশেষে মঙ্গলবার জেলা শাসকের নির্দেশে ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফখরুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলে যান। তবে সেখানে তিনি স্থানীয়দের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তারপরেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। বিক্ষোভের মুখে পড়তেই এলাকা ছেড়ে চলে যান তিনি। এরপরই কয়েকশো বাসিন্দা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দপ্তরের সামনে তীর, ধনুক, ধামসা, মাদল নিয়ে বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
এদিকে, গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের মদতেই এসব হচ্ছে বলে কটাক্ষ করে বিজেপি। সঙ্গে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পালটা তৃণমূলের দাবি, জমি বিক্রি করার কাজে যুক্ত ছিলেন বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। পরবর্তীতে গা বাঁচানোর জন্য তৃণমূলে যোগদান করেছেন। যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফকরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে এনকোয়ারি রিপোর্ট তৈরি করলাম। যাঁরা অবৈধভাবে ওই জমি দখল করে আছেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি হয়েছে। আমরা এই সমস্ত তালিকা মহকুমা শাসককে পাঠিয়ে দেব। একইসঙ্গে আমাদের দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এব্যাপারে রিপোর্ট করা হবে।’
উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগারওয়াল বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের মদতে এই কাজ হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্তারাও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বাসিন্দাদের লড়াইকে আমরা সমর্থন করছি। যে কোনও দরকারে বিজেপি পাশে থাকবে।’
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র বলেন, ‘স্ট্যাম্প পেপারে করে যাঁরা জায়গা বিক্রি করেছেন, তাঁরা বিজেপির নেতা। বিজেপির থেকে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন। এখন নিজেদের বাঁচাতে তৃণমূলে আসছেন। তৃণমূল এই ঘটনাকে সমর্থন করে না। এই মাঠ স্থানীয় বাসিন্দাদেরই থাকবে।’
আরও পড়ুন: Chanchal News | ধান কেনা নিয়ে জট চাঁচল কিষান মান্ডিতে, ক্ষোভ কৃষকদের