জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি : লকডাউনের কারণে জলপাইগুড়ি শহরের গানের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানদক্ষিণা দিতে পারছেন না। নতুন করে গান শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জলপাইগুড়ি শহরে গানের পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৭০ জন শিক্ষকশিক্ষিকা। এই পেশার উপর নির্ভরশীল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংসার চালাতে এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হয় তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এই শিল্পীরা।
শহরের হাকিমপাড়ায় থাকেন মৌসুমি রায়চৌধুরী। মৌসুমিদেবীর গানের স্কুলের নাম কিরাণা সংগীত মহাবিদ্যালয়। ২২ বছর ধরে এই গানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে। মৌসুমিদেবীর স্বামী অভিজিত্ চৌধুরীও গানের শিক্ষক। অভিজিতবাবু ডুয়ার্সের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে গান শেখান। গত এক মাস ধরে তিনি ডুয়ার্সে যেতে পারছেন না। কথা প্রসঙ্গে মৌসুমি চৌধুরী বলেন, আমার ৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। লকডাউনের জন্য কোনও শিক্ষার্থী আসতে পারছেন না। না আসার কারণে সম্মানদক্ষিণা পাচ্ছি না। শিক্ষার্থীরা সম্মানদক্ষিণা দেবার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা গানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। তাই আমি অনলাইনে শিক্ষার্থীদের গানের বিষয়ে টিপস দিচ্ছি। রোজগারে টান পড়ায় সংসার চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। আমার এক ছেলে কলেজে পড়ে। গানের টিউশনি আমাদের স্বামী-স্ত্রীর রোজগারের একমাত্র উত্স।
জলপাইগুড়ির ডি বি সি রোডে থাকেন সংগীতশিল্পী অরুণাংশু বড়ুয়া। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি গানের স্কুল চালাচ্ছেন। দৃষ্টিহীন এই শিল্পীর রোজগারের উত্স গান। তাঁর কাছে মুনিয়া দাস, পূজা রায়, রিয়া রায়, অন্বেষা রায়রা গান শেখেন। তিনি জানালেন, বর্তমানে ১০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেকেই খুবই ভালো। লকডাউনের জন্য এখন কাউকেই গান শেখাতে পারছি না। উপার্জনে আঘাত পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা গান শিখতে না আসতে পারায় মন খুব খারাপ।
জলপাইগুড়ি মিউনিসিপ্যাল মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় থাকেন সংগীতশিল্পী পর্ণা বসু। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছেলেমেয়েদের গান শেখান। চলতি পরিস্থিতিতে গানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপার্জনে আঘাত পড়ায় তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের অনুশীলনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে এটাও তাঁর চিন্তার বিষয়। পর্ণা বসুর ছাত্রী সুদেষ্ণা মৈত্র বললেন, গান শিখতে যেতে না পারার জন্য নতুন গান তুলতে পারছি না। পুরোনো গানগুলি এখন অনুশীলন করছি। আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক।
শিক্ষিকা মৌসুমি রায়চৌধুরীর ছাত্রী শ্রুতি ভৌমিক বললেন, গান শিখতে না যেতে পারার জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছে। ম্যাডামের কাছে টেলিফোনে পরামর্শ নিচ্ছি। অনলাইনেও ম্যাডাম শেখাচ্ছেন। তবে কাছে গিয়ে গান শেখার আনন্দই আলাদা। ছাত্র অনুভব পাল জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে ম্যাডামের কাছে গান শিখে নিজের দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এক মাস ধরে গান শিখতে যেতে না পারায় খানিকটা হলেও পিছিয়ে পড়ছি।