অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি : লকডাউনে স্বমহিমায় ফিরেছে তিস্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েকদিনে তিস্তার দূষণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। গত কয়েক দশকে বহু চেষ্টা করেও যা সম্ভব হয়নি, লকডাউনে তাই হয়েছে। আগের তুলনায় তিস্তার জল অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচুর মাছের দেখা মিলছে। ময়নাগুড়ি বার্নিশ এলাকাতে তিস্তা নদীর চরে কচ্ছপের দেখা মিলেছে।
কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীর দূষণ নিয়ে সরব ছিলেন পরিবেশপ্রেমী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তিস্তা নদীর ওপর গবেষণা করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, নাব্যতা কমে য়াওয়ার পাশাপাশি ক্রমশ দূষিত হচ্ছে তিস্তা নদী। মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে। এছাড়াও তিস্তার জলে ক্রোমিয়াম, আয়রন ও জিংকের মতো ভারী ধাতুর মান মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গিয়েছিল। ফলে মাছের উৎস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। বোরোলি, দারাঙ্গি, ট্যাংরা ইত্যাদি মাছ দিনের পর দিন কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু লকডাউনের কিছুদিন পর থেকে তিস্তায় প্রচুর পরিমাণে মাছের দেখা মিলছে। ঝাঁকে ঝাঁকে বোরোলি, পোনা, পুঁটি, ট্যাংরা, কই মাছ নদীর মধ্যে ঘুরছে। ভূগোলের অধ্যাপক তথা নদী বিশেষজ্ঞ ডঃ মধুসূদন কর্মকার বলেন, তিস্তা নদীর ওপর তৈরি হওয়া বিভিন্ন হাইড্রলিক প্রোজেক্ট, শিল্প কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত আবর্জনা, গৃহস্থালির আবর্জনা, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক কিংবা বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ নদীতে ফেলা এবং বাযুদূষণের কারণেও কয়েক বছরে তিস্তা নদী দূষিত হয়েছে। লকডাউনের জন্য সেই দূষণ অনেকটা কমে গিয়ে তিস্তা তার ভারসাম্য ফিরে পেয়েছে। সমাজ ও নদী বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, তিস্তার দূষণ নিয়ে এর আগে অনেক আন্দোলন করা হলেও লাভ হয়নি। তবে লকডাউনের জন্য পুরোপুরি না হলেও তিস্তার দূষণ অনেকটা কমেছে। ময়নাগুড়ি রোড পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দু রায় বলেন, লকডাউনে দূষণ কমে যাওয়ার জন্য তিস্তায় আবার প্রচুর মাছের দেখা মিলেছে। দেখা মিলেছে কচ্ছপের। পরিবেশপ্রেমী স্পোরের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, লকডাউনের আগে তিস্তার জলের থেকে এখনকার তিস্তার জল অনেক বেশি স্বচ্ছ। দূষণ কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে।