বিদেশ বসু, মালবাজার: লকডাউন জারি রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও মাল ব্লকের রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত ধলাবাড়ি এলাকায় বাড়িতে বসে নেই বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা পদ্মশ্রী করিমুল হক। নিঃস্বার্থ সমাজসেবাই তাঁকে নিয়ে এসেছে খবরের শিরোনামে।
র্যাশন দোকানের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিলির কাজ চলছে। এর মধ্যেই করিমুল সাহেব এলাকার র্যাশন দোকানগুলিতে পৌঁছে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছেন। বাড়িতে আসা অসহায়দের খাবারের যোগানও দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ করছেন। এর পূর্বে তিনি কেরল থেকে আসা কয়েকজন যুবককে নিজে মালবাজারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেন।
করিমুলসাহেব বলেন, ‘এখন আমার বসে থাকার জো নেই। যানবাহন চলাচল বন্ধ। এলাকার অনেক বাসিন্দারাই চিকিৎসার প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারছেন না। তাঁরা আমার কাছে আসেন। আমি তাদের প্রাথমিক পর্বে রক্ত চাপ, শর্করা ইত্যাদি পরীক্ষাগুলি করে দিচ্ছি। যাঁদের বেশি প্রয়োজন মনে হচ্ছে তাঁদেরকে স্বাস্থ্যবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছি।’
করিমুলসাহেবের কথায়, ‘আমি পূর্বে থেকেই কিছু চাল যোগাড় করে রেখেছিলাম। অসহায় বাসিন্দারা বললেই সেগুলি তাঁদেরকে বিতরণ করছি। এলাকার র্যাশন দোকানে যাতে অযথা ভিড় না হয় কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির পরিস্থিতিও তৈরি না হয় সে বিষয়ে নজর রাখছি। আমি সমস্ত বাসিন্দাদের কাছে একান্তভাবে আবেদন করেছি দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন মানার জন্য। সরকারের তরফে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে আবেদন জানানো হয়েছে তাতে আমাদের সকলকেই সাড়া দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, করিমুলসাহেব একটি ছোট চা বাগানের কর্মচারী। একসময় তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় যানবাহনের অভাবে মাকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এরপরই তিনি শপথ নেন আর কোনও মা বা অন্য কোনও রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যানবাহনের অভাব হতে দেবেন না তিনি। এক্ষেত্রে তিনি নিজের বাইকটিকেই অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তারপর থেকেই যেখান থেকে ডাক পড়ে সেখানেই তিনি পৌঁছে যান। বাইক করেই অসুস্থ রোগীদের পৌঁছে দেন হাসপাতলে। তাকে ‘বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন সকলের কাছে।
তাঁর এই নিঃস্বার্থ কাজ এখন কেবলমাত্র মাল ব্লক নয় গোটা দেশ তথা বিশ্বের কাছে নজিরবিহীন। সকলেই তাঁর কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। প্রত্যন্ত এই এলাকাবাসীকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানও দেওয়া হয়। তবে সমাজসেবার পথ থেকে কিন্তু সরে আসেননি করিমুলসাহেব। দিনের ২৪ ঘন্টা বছরের ৩৬৫ দিনই তিনি সমাজসেবার ব্রতকে সামনে রেখেই আজও এগিয়ে চলেছেন। লকডাউন পরিস্থিতিতেও যার বিরাম হয়নি। লকডাউন পরিস্থিতিতেও তাঁর এই কাজকে প্রশংসনীয় বলে জানিয়েছেন মালের মহকুমাশাসক শান্তনু বালা।