ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি : বাঁধাকপি বিক্রি করে কেজি প্রতি মাত্র ৫০ পয়সা, বেগুনে ১ টাকা, টমেটোয় ২ টাকা, লংকায় ৩ টাকার মতো মিলছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে লকডাউন চলার জেরে সবজির রপ্তানি বলতে কিছুই হচ্ছে না। বেশিরভাগ পাইকারি বাজার ও মান্ডি বন্ধ থাকায় বা কেনাবেচা তলানিতে ঠেকায় কাঁচা সবজির বিক্রিবাট্টায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বহু জায়গায় সবজি মাঠেই পড়ে থাকছে। তার উপর সম্প্রতি বৃষ্টির জেরে কিছু সবজি মাঠে পচতে শুরু করেছে। অন্য কোনও উপায় না থাকায় কৃষকরা শনিবার বিপুল সংখ্যায় ময়নাগুড়ি রোড হাটে উপস্থিত হন। কিন্তু তাঁরা সবজির দাম পাননি। সমস্যার জেরে কৃষকদের অনেককে কান্নাকাটি করতে দেখা য়ায়। এদিকে, সবজিবোঝাই ভুটভুটি, ভ্যান, রিকশার ভিড়ে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার অংশজুড়ে যানজট হয়। অতিরিক্ত কর্মী নিয়ে পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিবম রায়বসুনিয়া বলেন, কৃষকদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। লকডাউনের জেরে সবজি রপ্তানি একেবারেই কমে গিয়েছে। সম্প্রতি বৃষ্টিতে সমস্যা আরও বেড়েছে। ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, ময়নাগুড়ি কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় লকডাউনের জেরে কৃষকরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের সমস্যা মেটাতে প্রশাসনিকভাবে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে, কৃষকরা সমস্যায় পড়লেও একশ্রেণির ফড়ে মুনাফা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছে যতটা সম্ভব কম দামে কাঁচা সবজি কিনে তা খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। পরে ওই খুচরো ব্যবসায়ীরা আরও বেশি দামে ওই সবজি সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছেন। জলপাইগুড়ির সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার হিসাবে পরিচিত ধূপগুড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রঞ্জন দাস বলেন, বর্তমানে সুপার মার্কেটে ফসল আমদানি ১০ শতাংশে ঠেকেছে। যারা কৃষকদের জমি থেকে সবজি কিনছে তারা যেন কোনওভাবেই পরিস্থিতির সুযোগ না নেয় সেজন্য তাদের অনুরোধ করছি। কোনও কৃষক সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ জানালে আমরা সংগঠনের তরফে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
সাধারণ সময়ে হাটে যত সংখ্যক কৃষক ভিড় করেন এদিন তার দ্বিগুণ সংখ্যায় তাঁরা ময়নাগুড়ি রোড হাটে ভিড় জমিয়েছিলেন। অন্য সময় হাটে যত সবজি আসে এদিন তার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি সবজি এখানে এসেছিল। বাঁধাকপি, টমেটো, লংকার মতো সবজি এদিন কার্যত জলের দরে বিকিয়েছে। পরিস্থিতির জেরে কৃষকদের কয়েকজনকে হাটে কাঁদতে দেখা যায়। কৃষক বিপুল রায় বলেন, বৃষ্টির জেরে সবজিতে পচন ধরেছে। তাই জমি থেকে সবজি তুলে হাটে এসেছি। কিন্তু পাইকাররা সবজির দাম দিলেন না। আরেক কৃষক দোলন বর্মন বলেন, সবজির দাম মিলছে না। লকডাউনের সময় অন্য কাজেরও উপায় নেই। সংসার কীভাবে চলবে ভেবে কোনও কূলকিনারা পাচ্ছি না।
শীতের শেষে গরমের শুরুতে বছরের এই সময় ঝিঙে, শশা, পটল, করলার মতো ফসল বাজারে আসে। ভালো দামও মেলে। কিন্তু বর্তমানে দাম না মেলায় কৃষকরা এসব ফসল নষ্ট করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রায় তিন বিঘা জমিতে জাংলা বানিয়ে ঝিঙে ও পটল চাষ করা কৃষক সদানন্দ মণ্ডল বলেন, বাইরের পাইকার বা ক্রেতারা বাজারে আসছেন না। স্থানীয় ফড়েরাও এসব কিনতে চাইছে না। যোগাযোগ করে দুজনকে বাড়িতে ডেকে ৫ টাকা কেজিতে ঝিঙে এবং ১২-১৫ টাকা কেজিতে পটল বিক্রি করেছি। অথচ বাজারে গিয়ে দেখছি ঝিঙে কেজিতে ১৮-২০ টাকা এবং পটল কেজিতে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ময়নাগুড়ি রোড হাটের পাইকার দুলাল মণ্ডল বলেন, ভিনরাজ্যে সেভাবে সবজির চাহিদা নেই। অন্যান্য সময় ১০ গাড়ি সবজি রপ্তানি হলেও এখন মাত্র এক-দুই গাড়ি সবজি বাইরে যাচ্ছে। সারা ভারত কৃষকসভার ধূপগুড়ি থানা কমিটির সম্পাদক প্রাণগোপাল ভাওয়াল বলেন, কৃষকের জমির প্রতিটি ফসলের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে দিতে আমরা ইতিমধ্যেই কৃষি দপ্তরের কাছে অনুরোধ করেছি।
এদিন হাটে এত বেশি ভিড় ছিল যে সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই ছিল না। ময়নাগুড়ি রোড হাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, এভাবে হাটে ভিড় হলে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে হবে। অন্যদিকে, সবজিবোঝাই ভুটভুটি, ভ্যান, রিকশার ভিড়ে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার অংশজুড়ে যানজট হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাইওয়ে ট্রাফিক ওসি মুস্তাফা হুসেনের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী কাজ শুরু করে। পরে ময়নাগুড়ি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী এলাকায় পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়।