শিলিগুড়ি : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)। অথচ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর পাঠিয়েছে বর্ষাতি। পাশাপাশি খুব সাধারণ মানের মাস্ক ও গ্লাভস পাঠানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এই ক্ষোভ হজম করতে হচ্ছে মেডিকেল সুপারকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সবাই একজোট হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। চিকিৎসকরাও প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা করার মতো যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকতে হবে। না হলে নিজের জীবনকে বাজি রেখে কেউ এভাবে চিকিৎসা করতে চাইছেন না। বরং অনেক চিকিৎসকই বলছেন, উপযুক্ত পোশাক এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। সবারই তো পরিবার রয়েছে। এভাবে ডিউটি করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল সুপার ডাঃ কৌশিক সমাজদার অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
করোনা ভাইরাস থাবা বসানোর পর থেকেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিসপত্র না আসায় ক্ষোভ তৈরি হয়। বিভিন্ন বিভাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস যেমন দেওয়া হয়নি তেমনই পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টস বা পিপিই-রও ব্যবস্থা ছিল না। ফলে শুধু মেডিসিন বিভাগ বা আইসোলেশন ওয়ার্ডই নয়, করোনা ভাইরাসের স্ক্রিনিং ওয়ার্ড, সার্জারি, অর্থোপেডিক সহ অন্যান্য বিভাগেও চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এরই মধ্যে শুক্রবার মেডিকেলে বেশ কিছু পিপিই কিট এসেছে। কিন্তু সেই পিপিই কিট খোলার পরে দেখা যায়, সেখানে তন্তুজ-এর স্টিকার সাঁটা রেইনকোট, গ্লাভস, মাস্ক, চশমা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় কোনও সুরক্ষাই দেবে না বলে দাবি চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পিপিই আসলে একটি ত্রিস্তরীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা। তিনটি পৃথক পোশাক পরপর শরীরে চাপাতে হয়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরই তিনটি পর্যায়ে তৈরি (থ্রি লেয়ার) পোশাকে ঢাকা থাকে। এই পোশাক পরেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিনে এই পিপিই কিট ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসা করতে গিযে বহু চিকিৎসক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এখানে যদি এসব রেইনকোট পরে চিকিৎসা করতে হয় তাহলে তো ১০০ শতাংশ চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। পাশাপাশি যে মাস্ক দেওযা হয়েছে তাও একেবারেই নিম্নমানের। এন-৯৫ দূরের কথা, এগুলি সার্জিক্যাল মাস্ক নয় বলে অভিয়োগ উঠেছে। এমনকি গ্লাভসও হাতে ঢোকানোর আগেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। বহু চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী বিষয়টি নিযে সুপারের অফিসের সামনে ভিড় করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, আমরা সবাই এই পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে তৈরি রয়েছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা তো করতে হবে।