শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা : সস্তার নেপাল চায়ে রমরমার কারণে দার্জিলিং চায়ের বিপন্ন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি। রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে সাংসদ বিজয়াসাই রেড্ডির নেতৃত্বাধীন ওই সংসদীয় কমিটি এব্যাপারে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৭১তম রিপোর্টটিতে বেশ কিছু সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণের কথা জানানো হয়েছে। কমিটির সদস্য তথা দার্জিলিংয়ে (Darjeeling) সাংসদ রাজু বিস্ট বলেন, পাহাড়ের চা শিল্পের নানা সমস্যার কথা স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে রেখেছিলাম। এরপর আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের নানা ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে গোটা দেশের চা শিল্পের ওপর সংশ্লিষ্ট নানা মহলের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেছিল। সেই আলোচনার ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি হয়। তাতে সস্তার নেপাল চা-কে দার্জিলিংয়ে নামে বিক্রি করার ফলে পাহাড়ের চা বিশ্ববাজারে দেশীয় চায়ের ভাবমূর্তিই শুধু ধাক্কা খাচ্ছে, তাই নয়। এতে ঘরোয়া বাজারে চায়ের দামের ওপরও প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ রয়েছে। দাওয়াই হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রকের কাছে স্ট্যান্ডিং কমিটি নেপাল চায়ের রপ্তানির ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি আমদানিকৃত চায়ের গুণগতমান যাচাইয়ে জন্য দার্জিলিং জেলায় এনএবিএল অনুমোদিত কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে। নেপাল থেকে নিয়ে আসা চায়ের মজুতের ওপর ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ ট্রেড রেমেডিজ (ডিজিটিআর) যাতে তদন্ত করে ও আমদানিকৃত চায়ের মজুতের ওপর করের (অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি) ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়েছে।
পাহাড়, ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা শ্রমিকদের জমির অধিকার প্রদানের বিষয়টির ওপর স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে আলোকপাত করা হয়েছে। তাতে জমির অধিকারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ স্ক্রুটিনির সুপারিশ করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের মজুরি ইস্যুতে কমিটির পর্যবেক্ষণ, এটা মৌলিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ন্যূনতম দৈনিক মজুরি যাতে ঠিক করা যায় সেজন্য সরকারি পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটা ঠিক করে ফেলা উচিত বলেও কমিটি জানিয়েছে। সরকারি নানা প্রকল্প ও ডাইরেক্ট বেনেফিট ট্রান্সফারের সুফল পৌঁছে দিতে চা শিল্পের শ্রমিকদের ডেটা বেস বা তথ্য ভাণ্ডার তৈরির কথাও রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ক্ষুদ্র চা চাষিদেরও রিপোর্টে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরিতে পদক্ষেপের সওয়াল করা হয়েছে। দার্জিলিংয়ের ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদিত চা যাতে সেখানকার সংগঠিত ক্ষেত্রের ৮৭টি বাগানের মতো জিআই রেজিস্ট্রেশন পেতে পারে এমন কথাও বলেছে সংসদীয় কমিটি। পাহাড়ের চা শিল্পের পুনরুজ্জীবনে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থাও ভারত সরকার করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। দার্জিলিং ও উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের আধুনিকীকরণে টি বোর্ড যাতে সহযোগিতা করে এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে নাবার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে এগিয়ে আসা যেতে পারে বলে বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি মনে করছে। কমিটির সুপারিশের প্রশংসা করেছেন ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। টেরাই ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসাল জানান, সংগঠিত ক্ষেত্রের চা বাগানগুলি আগে টি বোর্ডের এনওসির প্রেক্ষিতে উন্নয়নমূলক কাজে ভরতুকির টাকা পেত। এখন সেটা বন্ধ রয়েছে। স্ট্যান্ডিং কমিটি বিষয়টি মন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন: Siliguri | ফুলের দোকানে আত্মঘাতী যুবক, ঘটনায় চাঞ্চল্য শিলিগুড়ির হাসমিচকে