নাগরাকাটা: সস্তার নেপাল চায়ের অবাধ প্রবেশে উত্তরবঙ্গের(North Bengal) চা শিল্প চরম সংকটের মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিযূষ গোয়েলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরল ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা)। বৃহস্পতিবার সিস্টার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ই-মেল মারফত নেপালের চায়ের কারণে উত্তরের চা শিল্পের করুণ দশার কথা তুলে ধরা হয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি ভারত-নেপাল বাণিজ্য চুক্তির পর্যালোচনা ও সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়িত করার দাবির কথা সিস্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমদানি করা নেপাল চায়ের ওপর ভারতের খাদ্য সুরক্ষা আইনের নানা দিক কার্যকর করা না হলে এখানকার চা শিল্পের দশা আর সঙিন হয়ে পড়বে। ই-মেলে সেকথা জানানো হয়েছে। আশা করছি সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে কেন্দ্র সরকার পদক্ষেপ নেবে।‘
সিস্টা জানিয়েছে, দেশের মোট চা উৎপাদনের শতকরা ৫২ শতাংশ এখন ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদিত কাঁচা পাতা থেকে আসছে। জাতীয় উৎপাদনে উত্তরের অবদান ৩৪ শতাংশ। উত্তরবঙ্গের বার্ষিক উৎপাদন এখন গড়ে ৩২০ মিলিয়ন কিলোগ্রামের মতো। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই ক্ষুদ্র চা চাষিদের। নেপাল চায়ের রমরমার কারণে উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এই ছয় জেলার ৫০ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু’ভাবেই বিপন্নতার শিকার।
সিস্টার বক্তব্য, নেপাল থেকে সিটিসি ও অর্থোডক্স দু’ধরনের চা-ই আসছে। ফলে পাহাড়ের পাশাপাশি ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা শিল্পকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ এখানকার চা যখন নেপালে যাচ্ছে তখন ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নেপাল চা কোনও শুল্ক ছাড়াই এখানে বিকোচ্ছে। এতে মার খাচ্ছে উত্তরবঙ্গ তথা গোটা দেশের চা শিল্প। নেপাল চাকে দার্জিলিং চা বলেও চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বলে সিস্টার অভিযোগ। বহুজাতিক কোম্পানি, প্যাকেটার্স ও অন্যান্য ক্রেতারা বছরে ২২ মিলিয়ন কিলোগ্রাম নেপালজাত সিটিসি ও অর্থোডক্স চা কিনছে। ফলে বাজার হারাচ্ছে ওই পরিমাণ দেশীয় চা। এতে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এর কুফল ভুগতে হচ্ছে স্থানীয় চা শিল্পকে। খোলা বাজার কিংবা নিলামে এখানকার চা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের কিছু ফ্যাক্টরির সিটিসি চা নিলামে কিলো প্রতি ৯০ টাকাও দাম না পাওয়ার তথ্য সিস্টার পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এসবের আঁচ এসে পড়ছে ক্ষুদ্র চা চাষিদের বাগানেও। তাঁরাও কাঁচা পাতার উপযুক্ত দাম প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত ৫ মাস ধরে ক্ষুদ্র চাষিরা উৎপাদন খরচের থেকেও কম মূল্যে কাঁচা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে বলে সিস্টার দাবি।
জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদকের পদেও থাকা বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলছেন, এরকমটা চলতে থাকলে এখানকার চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। বাণিজ্য বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ মেনে কেন্দ্রের উচিত দ্রুত নেপাল চায়ের ওপরও শুল্ক আরোপ করা। পাশাপাশি খাদ্য সুরক্ষার ওপর যে ৩ থেকে ৪টি আইন রয়েছে সেগুলি রপ্তানি করা নেপাল চায়ের ওপর আরোপ করা হোক। প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির সময় সেই চায়ের উৎসের শংসাপত্রও বাধ্যতামূলক করা হোক।