প্রকাশ মিশ্র,মানিকচক: বাড়ির অমতে বিয়ে করে বতর্মানে মাচায় দিন কাটাচ্ছেন নবদম্পতি। এমন ঘটনারই সাক্ষী হয়ে রয়েছেন ভুতনির একটি গ্রামের বাসিন্দারা।
মাস তিনেক আগে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তারপর শুরু হয় এখানে সেখানে ঘোরাঘিুর। কিন্তু পাড়াময় এভাবে ঘুরে বেড়ানোটা ভালো চোখে দেখেনি পাড়ার লোকজন। তাই একপ্রকার জোর করে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই তাতে রাজি হয়ে যান প্রেমিক যুগল। এরপর গত বহৃস্পতিবার স্থানীয় এক শিবমন্দিরে দুই হাত এক হয়ে যায়। বিয়ে বিধান বাতলে দেন গ্রামের প্রবীণ মহিলারা। মালাবদল দেখতে শতাধিক উৎসাহী গ্রামবাসী ভিড় জমান। এ পযর্ন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। এরপর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।
ছেলে নববধূকে নিয়ে নিজের বাড়িতে গেলে সেখানে কার্যত তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। বাড়িতে তাঁদের কোনও স্থান হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা যান মেয়ের বাড়িতে। সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। জামাই-মেয়ে ঘরে তুলতে অস্বীকার করেন মেয়ের বাড়ির লোক। দুই পরিবার থেকে অপমাণিত হয়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন স্থানীয়ে একটি মাঠে। গত কয়েকদিন ধরে মাঠের মাচাতেই দিন কাটাচ্ছেন নবদম্পতি। কেউ তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িযে দেননি। ফাঁকা মাঠে রোদ-ঝড়-জল-বৃষ্টির মধ্যে মাথা গুঁজে পড়ে রয়েছেন তাঁরা। নবদম্পতিকে দেখতে উৎসাহী মানেুষর ভিড়ে এখন জমজমাট সেই গ্রাম।
পাত্র জানান, তাঁদের খাওয়াদাওয়া কিছুই জুটছে না। গত কয়েদিন ধরে অর্ধাহারে, অনাহারে থেকে কথা বলার মতো শক্তিটুকুও পাচ্ছি না। আমরা পাঁচদিন ধরে মাঠের মধ্যে পড়ে আছি।দু’পক্ষের কেউই আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেননি। তবুও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছি। মনে হয় বরফ গলে যাবে। আশা করছি, আমার বাবা আমাদেরকে ঠিক আশ্রয় দেবেন। পাত্রী জানায়, বিয়ে করার পর এই অবস্থা হবে বুঝতে পারিনি। মা-বাবা মুখ ফিরিয়ে নেবে ভাবতে পারিনি। গ্রামবাসীরা বিয়ে দিল। অথচ তাঁরাও এখন দেখছেন না।
স্থানীয় বুথ সদস্য তথা চিকিৎসক শ্যাম মণ্ডল বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা। চোখের সামনে এটা ঘটছে। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নবদম্পতিকে যাতে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়, সেই বিষয়ে আমরা পরিবারকে বোঝাচ্ছি। কিন্তু তাঁরা রাজি হচ্ছেন না। আমরা তো আর জোর করতে পারি না। দেখা যাক কী হয়।
অন্যদিকে হীরানন্দপুরের অঞ্চল প্রধান কাজল মণ্ডল বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি। আমরা পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে নবদম্পতিকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছি। তবে নবদম্পতিকে অসহায় অবস্থায় দেখতে অবশ্য স্থানীয় মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন। সকাল-সন্ধ্যারাত পযর্ন্ত কাযর্ত দশর্নীয় বিষয় হয়ে উঠেছেন তাঁরা।